বাংলাদেশের পাখি : কোকিল

বাংলাদেশের পাখি : কোকিল
এই পাখিটির নাম কোকিল। ইংরেজি নাম Asian koel, বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Eddyways scoopacea. মেয়ে-পুরুষের শরীরের মাপ ৪০-৪৩ সেন্টিমিটার।


এই হচ্ছে কোকিল। সে বাসা করে না, কৌশলে বুদ্ধি খাটিয়ে ডিম পাড়ে কাক, ছাতারে ও হাঁড়িচাচা পাখির বাসায়। এই তিনটি পাখির বাসাই প্রথম নির্বাচন। তারপরের পছন্দ হচ্ছে, কসাই ও বুলবুলির বাসা। কোনােটাই না পেলে তখন খোজে অন্য পাখির বাসা। কুকোর বাসায় ডিম পাড়াটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। কসাইয়ের বাসায় কোকিলকে ডিম দিতে আমি ১৯ বার দেখেছি। সর্বশেষ দেখেছিলাম ১৯৯৬-এর এপ্রিলে জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটি ক্যাম্পাসে। ওই বাসা ও কোকিলের বাচ্চাকে আমরা পরপর কিছুদিন পর্যবেক্ষণও করেছিলাম।

কোকিলরা প্রথমে বাসা নির্বাচন করে—একাধিক বাসা। পুরুষটি 'কুউউ কুউউ' ডাক ছেড়ে বাসার মালিককে ক্ষেপিয়ে তােলে। ওরাও ভালাে করেই জানে কোকিলের মতলব। ধাওয়া করে। ওই সুযােগে মেয়ে কোকিল ওই বাসায় গিয়ে ডিম পাড়ে। কোকিলেরা ডিম পাড়ে ৪-৬টা। এক বাসায় দুটির বেশি ডিম পাড়ে না। অবশ্যই ওই বাসার দু'টি ডিম ফেলে দেয় আগে। ওরা। অংকটা ভালােই জানে। এই যে ৪ থেকে ৬টা ডিম, মেয়ে কোকিল তা একাধিক বাসায় ৪৮-৫০ ঘণ্টার ভেতরে ছাড়ে। সময় পার হয়ে গেলে, অর্থাৎ ডিম কোনাে বাসায় ছাড়তে না পারলে, ডিম ছেড়ে দেয় গাছের ডালে বসে-যা মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়।

আর,কাক - ছাতারেরা জানে কোকিলের স্বভাব, তবুও বােকার হদ্দ ওই পাখিরা কোকিলের ডিমে তা দেয়, বাচ্চা ফোটায় ও লালন-পালন করে। কোকিলের বাচ্চারাও বংশগতির ধারায় বাসা থেকে অন্য বাচ্চাদের ঠেলে ফেলে দেয়। এ হচ্ছে প্রকৃতির এক পূঢ় রহস্য। কোকিলের ডিম ফুটে বাচ্চা হতে সময় লাগে ২৯৪ ঘন্টা থেকে ৩০০ ঘণ্টা। অথচ কাক-ছাতারেদের সময় লাগে আরাে বেশি। এখানেও রয়েছে প্রকৃতির পূঢ় রহস্য ও অংকের নিখুঁত হিসাব। আবার ডিম পাড়ার পরে বাচ্চা হওয়া ও বাচ্চাদের ওড়া পর্যন্ত কোকিলেরা ডিমপাড়া বাসাগুলাে নজরে রাখে।

পুরুষ কোকিলের রঙ কুচকুচে কালাে। তার ওপরে হাল্কা নীলের আভা। সবুজাভ হলুদ ঠোট। চোখের রঙ পাকা মরিচের মতাে লাল। ওই লালে যেন হালকা আলতা রঙ ছড়ানাে। মেয়ে কোকিল বাদামি, তাতে হালকা কালচে আভা ও সারা শরীরে সাদা সাদা ছিট-ছােপ আছে। মেয়ে-পুরুষের শরীরের মাপ ৪০-৪৩ সেন্টিমিটার। কোকিলের ইংরেজি নাম (Asian koel. বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Eudynamys scoopacea. পৃথিবীতে কোকিল ও কোকিলের জাতভাই আছে অনেক। সবাই কিন্তু পরের বাসায় ডিম পাড়ে না। কেউ কেউ বাসা বাঁধে। আমাদের দেশে কোকিলের জাতভাইরা হচ্ছে পাপিয়া, বউ কথা কও, চোখ গেল। সবাই ডিম পাড়ে গ্রীষ্মকালে।

কোকিল চেনে না বা ওর কুউউ কুউউ' মধুর সুর শােনে নি—বাংলাদেশে এমন মানুষ বােধ হয় নেই। কী মিষ্টি-মােলায়েম আর সুরেলা কণ্ঠ ওই কোকিলের। তবুও পাখিবিজ্ঞানীরা ওকে ‘গায়ক পাখি' হিসেবে স্বীকার করে না। কেন করে না , শিশু-কিশােরেরা বড় হয়ে তা জানতে পারবে, যদি জানার ইচ্ছা থাকে।
কোকিলের খাদ্য তালিকায় আছে নানান রকম ফল ও কিছু নির্দিষ্ট পােকা ও তাদের ডিম। এসব খেয়ে ওরা পরিবেশের উপকারই করে- ভালাে রাখে গাছপালার স্বাস্থ্য।

তাল-লয়-ছন্দে ডাকতে পারে পুরুষ কোকিলই–মেয়েটি তা পারে না। উৎসাহী শিশু-কিশোরেরা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম ও শহরে কোকিল দেখতে পারে, কান পেতে শুনতে পারে ওদের মধুর ডাক। ঢাকা শহরেও অনেক কোকিল আছে।

কোকিল সুন্দর পাখি। রাতদুপুরেও শােনা যেতে পারে ওদের ডাকাডাকি। রাতদুপুরে ডাকে কেন? ডাকার তিনটি কারণের ভেতর একটা হচ্ছে ভয় পাওয়া।

চির বাউল স্বভাবের এই পাখিটি বাংলাদেশে ভালােই আছে, প্রচুর আছে এবং ছিল বলেই কোকিলের মধুর ডাককে ঘিরে কবি-গীতিকারেরা লিখেছেন অনেক কবিতা ও গান। ওর ওই বাউল স্বভাবের জন্য ও ফাকিবাজির কারণে মানুষ ওদের বসন্তের কোকিল' নামে উপমা খাড়া করেছে।

উৎসাহী শিশু-কিশােরেরা কোকিলের অন্যের বাসায় ডিম পাড়ার খেলাটা দেখতে পারে একটু কষ্ট করলে বা কোকিলের পেছনে কিছুটা সময় নষ্ট করলে। সে এক মজার খেলাই বটে!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url