বাংলাদেশের পাখি : চিল
![]() |
| বাংলাদেশের পাখি : চিল |
মুরগিটি তার দশটি তুলতুলে ছানা নিয়ে চরছিল উঠোনের একপাশে। ওই উঠোনে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখা যায় না—এমনই ঘন বুনট আম, বরই, সফেদা, পেয়ারা ও আতা গাছের ডালপালার। বয়সী একটা বরই গাছও ডালপালা মেলে দাড়িয়ে আছে প্রহরীর মতাে।
তবুও একটি শিকারি পাখি ডানা মুড়ে ডাইভ মারল অনেক উঁচু থেকে, বােমারু বিমানের মতাে নেমে পড়ল উঠোনের মাথায়, কী অসম্ভব চাতুর্যে যে সে বরইয়ের ডালপালার ফাঁক দিয়ে নেমে এল মাটির কাছাকাছি! বাড়ির লােকজনকে হতচকিত করে দিয়ে।
বিদ্যুৎ বেগে দু'পায়ের নখরে গেঁথে ফেলল দু’টি মুরগির ছানা আর মুরগির রণমূর্তি আর চেঁচামেচিকে তােয়াক্কা না করেই খাড়া উঠে গেল পেয়ারার ডালপালার ফাক দিয়ে। ক্ষিপ্ত মুরগি উড়ল ওকে ধরার জন্য, ছানাদের উদ্ধার করার জন্য।
বিদ্যুৎ বেগে দু'পায়ের নখরে গেঁথে ফেলল দু’টি মুরগির ছানা আর মুরগির রণমূর্তি আর চেঁচামেচিকে তােয়াক্কা না করেই খাড়া উঠে গেল পেয়ারার ডালপালার ফাক দিয়ে। ক্ষিপ্ত মুরগি উড়ল ওকে ধরার জন্য, ছানাদের উদ্ধার করার জন্য।
ফল হল না কিছুই। আকাশে শােনা যেতে লাগল মুরগির ছানা দু’টির 'টিউ টিউ’ কান্না। এক সময় তা মিলিয়ে গেল দূরে। মুরগিটি তখনাে রাগে ফুসছে। 'কটর কটর ডাক ছেড়ে অন্য বাচ্চাদের কাছে ডেকে যেন গুনে দেখছে বাকি আটটা ছানা ঠিক আছে কিনা! সে কিন্তু পাখিটির ডানার ছায়া দেখামাত্রই ছানাদের সতর্ক সঙ্কেত দিয়েছিল।
অসম্ভব ক্ষীপ্র গতির ওই শিকারি পাখিটি পলাতক ছানাদের ভেতর থেকেই দুটিকে গেথেছে দু'পায়ের নখরে। এরা তাে পােষা মুরগি। হত যদি সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটের বন পাহাড়ের বনমুরগি, তাহলে শিকারি পাখিটি এভাবে ডাইভ মেরে সফল হত না।
বনমুরগি পােম্বা মুরগির চেয়ে অনেক বেশি চালাক। ওদের ছানারা সতর্ক সঙ্কেত পাবার সঙ্গে সঙ্গে পালাতে পারে অসম্ভব ক্ষিপ্রতায়। তবুও শিকারি এই পাখিটি মাঝে-মধ্যে বনমুরগির বাচ্চাদেরও শিকার করে। সেক্ষেত্রে কৌশলটা হয় একটু ভিন্নরকম। বনমুরগির ছানারা হয় খুবই চতুর।
এবার আরেকটি শিকারি পাখির সাহস ও শিকার-কৌশলের কথা জানা যাক। একদল ছেলেপুলে একটি কালাে গোখরাে সাপকে ধাওয়া করে। চষাক্ষেতের মন্ত ভারি একখানা ঢিল ছুড়তেই তা পড়ল গিয়ে সাপটির কোমরে। পেটের তলায়ও ছিল ঢিল ।
এবার আরেকটি শিকারি পাখির সাহস ও শিকার-কৌশলের কথা জানা যাক। একদল ছেলেপুলে একটি কালাে গোখরাে সাপকে ধাওয়া করে। চষাক্ষেতের মন্ত ভারি একখানা ঢিল ছুড়তেই তা পড়ল গিয়ে সাপটির কোমরে। পেটের তলায়ও ছিল ঢিল ।
কোমরে ঢিল পড়াতে সাপটির কোমর যায় ভেঙে। কোমরভাঙা যে কোনাে সাপ আর পালাতে পাবে না। কালাে গোথবােটিও পারছিল না। তবে ফণা তুলে ফুসছিল দারুণ নােম। পাড়াতেই ছিল একটি পােষাবেজি। ছেলে-পুলেদের মাথায় বুদ্ধি এল যে, ওই বেজিটিকে এনে 'সাপ-বেজির লড়াই দেখবে।
বেজি এল। সাপ দেখে তেড়ে গেল। সাপের তাে তখন মাথা খারাপ হবার দশা। ছেলে-পুলেরা দাড়িয়েছে গােল হয়ে, হই-হল্লা করছে। সাপ-বেজির লড়াই দেখার জন্য উত্তেজিত সবাই।
কিন্তু সবাইকে হতভম্ব করে দিয়ে, সবার মাথায় ডানার বাতাস খেলিয়ে শিকারি পাখিটি মাটিতে নেমেই নখরে গাথল সাপটিকে—এক পা দিয়ে ধরল সাপটির ঘাড়, অন্য পা দিয়ে ভাঙা কোমর আর সাঁই করে উঠ গেল অনেক ওপরে। লড়াকু বেজিটিও বুঝতে পারল না তার প্রতিদ্বন্দ্বী গেল কোথায়!
যে দুটি পাখির কথা বলা হল, তার প্রথমটি ছিল শখচিল। দ্বিতীয়টি ভুবনচিল। দু'রকম ভুবনচিল বাংলাদেশে দেখা যায়, এক রকম আমাদের নিজস্ব পাখি, অন্যটা পরিযায়ী । গোখরােটিকে নখনে গেঁথেছিল কিন্তু আমাদের দেশি ভুবনচিল।
শঙ্খচিল ও ভুবনচিলদের ওড়ার ভঙ্গি, ডাইভ মারার কৌশল, বাসার গড়ন-ধরন ও খাদ্য তালিকা প্রায় অভিন্ন। শঙ্খচিলের ডাককে কান্না' বলে মনে হয়-মনে হয় ডাকছে কারাে করুণা ভিক্ষে করে। ওদের ছানাদের কান্না আরাে করুণ।
খিদে পেলে শঙ্খচিলেরা বেশি ডাকে, বাসা থেকে ডিম-বাচ্চা খােয়া গেলেও বেশি বেশি ডাকে, আবার কারণেও ডাকে। সব সময়ই তার ডাকে যেন কান্না মিশে থাকে। অথচ মানুষের হাতে ধরা পড়লে ডাকাডাকি করেই না-যেন বােবা হয়ে যায়, চোখ দুটি যায় ঘােলা হয়ে। ছো দিয়ে।
ভাসমান মাছ, হাঁস-মুরগির বাচ্চা, ছােট ছােট সাপ বা ব্যাপ্ত তুলে নিতে এরা। ওস্তাদ। ছেলেবেলায় বিল-ঝিলে মাছ ধরার সময় আমি যখনই নির্বিষ জলসাপ (কামড়াতেও জানে না এরা) পেতাম, তখন সাপটির লেজ ধরে কয়েক পাক ঘুরিয়ে ছুড়ে দিতাম শূন্যে, ঝুঁকি থেকে কোনাে একটি শচিল ডাইভ মেরে শূন্য থেকেই নখরে ধরত সাপটি, অন্যরা করত ওকে ধাওয়া।
তখন ওদের কাড়াকাড়ির খেলাটা হত দেখার মতাে। কী সুন্দর পাক যে খেত ওরা! এই সাঁ করে নেমে আসত নিচে, এই উঠে পড়ত খাড়াভাবে শূন্যে। কাড়াকাড়ির খেলায় এক সময় জিতে যেত একজন। সাপ নিয়ে সে চলে যেত বহুদূরে। ভুবনচিলেরাও শূন্য থেকে শিকার ধরতে ওস্তাদ।
শঙ্খচিল পছন্দ করে গ্রাম। ঢাকার শহরতলীর লেক-জলাশয়ে কখনাে কখনাে দেখা যায়। বাসাও করে ঢাকা শহরে। পাশাপাশি, ভুবনচিলেরা পছন্দ করে শহর-নগর-বন্দর ও হাট-বাজার। ঢাকা শহরে প্রচুর ভুবনচিল আছে।
ঢাকার আকাশে প্রায়ই চোখে পড়ে পাতিকাক বনাম ভুবনচিলের ‘ডগফাইট'। পাতিকাকেরা জ্বালিয়ে মারে ওদের। কমলাপুর রেল স্টেশনের লাইটিং টাওয়ারগুলাের মাথায় বাসা করে যে ভুবনচিলেরাওদেরকে যে কী রকম উত্যক্ত করে পাতিকাকেরা! উৎসাহী যে কেউ ইচ্ছে করলে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
সুযােগ পেলেই পাতিকাকের ডিম-বাচ্চা ছিনতাই করে ভুবনচিলেরা। পাতিকাকের তাই দু চোখের বিষ ওরা। ভুবনচিল শঙ্খচিলের চেয়ে উড়তে যেমন পারে দ্রুত, তেমনি ডাইভ মারেও ভালাে। ভুবনচিল পাক খেতে পারে অসম্ভব দ্রুতগতিতে। অনেকক্ষণ পাখা না ঝাপটেও বাতাসে ভাসতে পারে সাবলীল ভঙ্গিতে।
কয়েকটি বা কয়েক শ' ভুবনচিল মিলে ঢাকার আকাশে মাঝে মধ্যে যেন বউচি' খেলায় মেতে ওঠে। সে এক অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য। উৎসাহীরা দেখলে মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। শুধু ঢাকা কেন, যে কোনাে শহর-বন্দরের আকাশে ভুবনচিলদের কাণ্ড-কারখানা দেখা যাবে। ভুবনচিলেরা বহু ওপরে থেকে ডানা গুটিয়ে নিচের দিকে নামতে পারে শঙ্খচিলের চেয়ে দ্রুত গতিতে-মনে হয়, মাটিতে বুঝি আছড়ে পড়বে, কিন্তু পড়ে না।
1 Brahmiony kite, (Haliastur indus), bet : (Black kite) বৈজ্ঞানিক নাম (Mi/v4s rigratis govinda) এটা আমাদের আবাসিক পাখি) ২(ক) অন্য একটি ভুবনচিলের বৈজ্ঞানিক নাম (M. Migram lineatids) এরা পরিযায়ী। ৩. সাদা চিল : (Black-shouldered kite),বৈজ্ঞানিক নাম (Exans caerogleus)
ধানক্ষেতের আশেপাশে ইদুর ধরার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে, তাই এদেরকে ধানচিলও বলা হয়। লােকালয় থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। ১, শচিল (৪৮ সেন্টিমিটার) : বুক, পেটের কিছু অংশ ও গলাসহ কপাল সাদা। ওই সাদার ওপরে খাড়া খাড়া টান। পিঠও সাদা, সেখানে খাড়া দাগ অস্পষ্ট। ডানা বুজানাে অবস্থায় পিঠের রঙ ময়লাটে লাল, পেটের নিচের অংশের রঙও সে রকম। ডানার প্রান্ত হালকা কালাে।
লেজের আগাটা গােলাকার ধরনের। অল্পবয়সী কিশাের-কিশােরী শঙ্খচিলের পিঠ থাকে খয়েরি, ডানাও তাই। বুকের সাদাটাও থাকে মলিন।
ছােট মাছ, ছােট সাপ, হাঁস-মুরগির ছানা প্রিয় খাদ্য। কাকড়াও খায় । কণ্ঠস্বর হচ্ছে ‘টা ট্যা, টিউ...।' দু'জনে মিলে বাসার জায়গা নির্বাচনে লাগায় ২-৭ দিন। তারপর দু’ জনে মিলেই শুকনাে ডালপালা দিয়ে গাছের ডালে বেশ বড়সড় বাসা করে ৩-৫ দিনে। ডিম পাড়ে দু"টি, সাদাটে রং। দুজনে পালা করে ডিমে তা দেয় । ২৬-২৮ দিনে ডিম ফোটে। দু'জনেই বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাচ্চারা উড়তে পারে ২৮-৩২ দিনে।
লেজ ইলিশ মাছের লেজের মতাে। ওই লেজ ওদের ওড়ার সময় দারুণ সহায়তা করে। নৌকার হালের মতাে লেজ ব্যবহার করে ওরা ঝটপট দিকবদল যেমন করাতে পারে, তেমনি পারে বাতাসের প্রতিকূলে উড়তে ।
দ্রুত ওপরে উঠে যেতে পারে, নামতেও পারে নিচে। ভুবনচিল এক নজরে খয়েরি রঙের পাখি । ডানার ওপরে হালকা বাদামি টান ও ছােপ। দূর থেকে লালচে-খয়েরি মনে হয়। ঠোট কালচে। চোখের মণি লালচে। দলে থাকতে পছন্দ করে। বাঁকানাে ঠোট ছুরির মতাে ধারাল ।
পরিযায়ী ভুবনচিলের (৬৮ সেন্টিমিটার) লেজটা ইলিশ মাছের লেজের মতাে নয়। এদের বুক-পেটে হালকা খাড়া খাড়া দাগ । এটি আমাদের স্থানীয়টার চেয়ে আকারে কিছুটা বড়। একটানা উড়তেও পারে অনেকক্ষণ।
ভুবনচিল শীতকালেই বাসা করে বেশি, মাঝে-মধ্যে গরমকালেও। শচিল বাসা করে শরতে বেশি, শীতে কম। গরমকালেও ৰাসা করতে দেখা যায়। ভুবনচিল গাছের চেয়ে বেশি বাসা করে টাওয়ার, পানির ট্যাংকির তলায় বা ওপরে।
বড় বড় শহরে খুঁজলে ডিশ-অ্যান্টেনার ভেতরেও বাসা পাওয়া যাবে এরা বছরের পর বছর একই জায়গায় বাস করতে পছন্দ করে। দু জনে মিলে জায়গা নির্বাচন করে ২-৪ দিনে। বাসা বানায় প্রায়ই গাছের কাঁচা সরু ডাল দিয়ে !
গাছের কাঁচা ডাল পায়ে ধরে যখন আকাশে ঘুরে ঘুরে ওড়ে তখন মনে হয় ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। ঢাকার আকাশে এটা দেখা যায়, অন্যান্য শহরেও। ঢাকার মতিঝিলসহ বড় বড় ভবনগুলাের শীততাপ নিয়ন্ত্রণ বক্সের ওপরে বা আড়ালেও বাসা করে। ডিম প্রায়শ ৩টি। ২ ও ৪ সংখ্যা কম।
যে দুটি পাখির কথা বলা হল, তার প্রথমটি ছিল শখচিল। দ্বিতীয়টি ভুবনচিল। দু'রকম ভুবনচিল বাংলাদেশে দেখা যায়, এক রকম আমাদের নিজস্ব পাখি, অন্যটা পরিযায়ী । গোখরােটিকে নখনে গেঁথেছিল কিন্তু আমাদের দেশি ভুবনচিল।
শঙ্খচিল ও ভুবনচিলদের ওড়ার ভঙ্গি, ডাইভ মারার কৌশল, বাসার গড়ন-ধরন ও খাদ্য তালিকা প্রায় অভিন্ন। শঙ্খচিলের ডাককে কান্না' বলে মনে হয়-মনে হয় ডাকছে কারাে করুণা ভিক্ষে করে। ওদের ছানাদের কান্না আরাে করুণ।
খিদে পেলে শঙ্খচিলেরা বেশি ডাকে, বাসা থেকে ডিম-বাচ্চা খােয়া গেলেও বেশি বেশি ডাকে, আবার কারণেও ডাকে। সব সময়ই তার ডাকে যেন কান্না মিশে থাকে। অথচ মানুষের হাতে ধরা পড়লে ডাকাডাকি করেই না-যেন বােবা হয়ে যায়, চোখ দুটি যায় ঘােলা হয়ে। ছো দিয়ে।
![]() |
| বাংলাদেশের পাখি : ভুবন চিল |
ভাসমান মাছ, হাঁস-মুরগির বাচ্চা, ছােট ছােট সাপ বা ব্যাপ্ত তুলে নিতে এরা। ওস্তাদ। ছেলেবেলায় বিল-ঝিলে মাছ ধরার সময় আমি যখনই নির্বিষ জলসাপ (কামড়াতেও জানে না এরা) পেতাম, তখন সাপটির লেজ ধরে কয়েক পাক ঘুরিয়ে ছুড়ে দিতাম শূন্যে, ঝুঁকি থেকে কোনাে একটি শচিল ডাইভ মেরে শূন্য থেকেই নখরে ধরত সাপটি, অন্যরা করত ওকে ধাওয়া।
তখন ওদের কাড়াকাড়ির খেলাটা হত দেখার মতাে। কী সুন্দর পাক যে খেত ওরা! এই সাঁ করে নেমে আসত নিচে, এই উঠে পড়ত খাড়াভাবে শূন্যে। কাড়াকাড়ির খেলায় এক সময় জিতে যেত একজন। সাপ নিয়ে সে চলে যেত বহুদূরে। ভুবনচিলেরাও শূন্য থেকে শিকার ধরতে ওস্তাদ।
শঙ্খচিল পছন্দ করে গ্রাম। ঢাকার শহরতলীর লেক-জলাশয়ে কখনাে কখনাে দেখা যায়। বাসাও করে ঢাকা শহরে। পাশাপাশি, ভুবনচিলেরা পছন্দ করে শহর-নগর-বন্দর ও হাট-বাজার। ঢাকা শহরে প্রচুর ভুবনচিল আছে।
ঢাকার আকাশে প্রায়ই চোখে পড়ে পাতিকাক বনাম ভুবনচিলের ‘ডগফাইট'। পাতিকাকেরা জ্বালিয়ে মারে ওদের। কমলাপুর রেল স্টেশনের লাইটিং টাওয়ারগুলাের মাথায় বাসা করে যে ভুবনচিলেরাওদেরকে যে কী রকম উত্যক্ত করে পাতিকাকেরা! উৎসাহী যে কেউ ইচ্ছে করলে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
সুযােগ পেলেই পাতিকাকের ডিম-বাচ্চা ছিনতাই করে ভুবনচিলেরা। পাতিকাকের তাই দু চোখের বিষ ওরা। ভুবনচিল শঙ্খচিলের চেয়ে উড়তে যেমন পারে দ্রুত, তেমনি ডাইভ মারেও ভালাে। ভুবনচিল পাক খেতে পারে অসম্ভব দ্রুতগতিতে। অনেকক্ষণ পাখা না ঝাপটেও বাতাসে ভাসতে পারে সাবলীল ভঙ্গিতে।
কয়েকটি বা কয়েক শ' ভুবনচিল মিলে ঢাকার আকাশে মাঝে মধ্যে যেন বউচি' খেলায় মেতে ওঠে। সে এক অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য। উৎসাহীরা দেখলে মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। শুধু ঢাকা কেন, যে কোনাে শহর-বন্দরের আকাশে ভুবনচিলদের কাণ্ড-কারখানা দেখা যাবে। ভুবনচিলেরা বহু ওপরে থেকে ডানা গুটিয়ে নিচের দিকে নামতে পারে শঙ্খচিলের চেয়ে দ্রুত গতিতে-মনে হয়, মাটিতে বুঝি আছড়ে পড়বে, কিন্তু পড়ে না।
চিল জাতীয় পাখি বাংলাদেশে আছে ৩ রকম:
১. শঙ্খচিল : ইংরেজি :
1 Brahmiony kite, (Haliastur indus), bet : (Black kite) বৈজ্ঞানিক নাম (Mi/v4s rigratis govinda) এটা আমাদের আবাসিক পাখি) ২(ক) অন্য একটি ভুবনচিলের বৈজ্ঞানিক নাম (M. Migram lineatids) এরা পরিযায়ী। ৩. সাদা চিল : (Black-shouldered kite),বৈজ্ঞানিক নাম (Exans caerogleus)
ধানক্ষেতের আশেপাশে ইদুর ধরার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে, তাই এদেরকে ধানচিলও বলা হয়। লােকালয় থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। ১, শচিল (৪৮ সেন্টিমিটার) : বুক, পেটের কিছু অংশ ও গলাসহ কপাল সাদা। ওই সাদার ওপরে খাড়া খাড়া টান। পিঠও সাদা, সেখানে খাড়া দাগ অস্পষ্ট। ডানা বুজানাে অবস্থায় পিঠের রঙ ময়লাটে লাল, পেটের নিচের অংশের রঙও সে রকম। ডানার প্রান্ত হালকা কালাে।
লেজের আগাটা গােলাকার ধরনের। অল্পবয়সী কিশাের-কিশােরী শঙ্খচিলের পিঠ থাকে খয়েরি, ডানাও তাই। বুকের সাদাটাও থাকে মলিন।
ছােট মাছ, ছােট সাপ, হাঁস-মুরগির ছানা প্রিয় খাদ্য। কাকড়াও খায় । কণ্ঠস্বর হচ্ছে ‘টা ট্যা, টিউ...।' দু'জনে মিলে বাসার জায়গা নির্বাচনে লাগায় ২-৭ দিন। তারপর দু’ জনে মিলেই শুকনাে ডালপালা দিয়ে গাছের ডালে বেশ বড়সড় বাসা করে ৩-৫ দিনে। ডিম পাড়ে দু"টি, সাদাটে রং। দুজনে পালা করে ডিমে তা দেয় । ২৬-২৮ দিনে ডিম ফোটে। দু'জনেই বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাচ্চারা উড়তে পারে ২৮-৩২ দিনে।
![]() |
| বাংলাদেশের পাখি : শঙ্খচিল |
২. ভুবন চিল (আবাসিক, ৬১ সেন্টিমিটার) :
লেজ ইলিশ মাছের লেজের মতাে। ওই লেজ ওদের ওড়ার সময় দারুণ সহায়তা করে। নৌকার হালের মতাে লেজ ব্যবহার করে ওরা ঝটপট দিকবদল যেমন করাতে পারে, তেমনি পারে বাতাসের প্রতিকূলে উড়তে ।
দ্রুত ওপরে উঠে যেতে পারে, নামতেও পারে নিচে। ভুবনচিল এক নজরে খয়েরি রঙের পাখি । ডানার ওপরে হালকা বাদামি টান ও ছােপ। দূর থেকে লালচে-খয়েরি মনে হয়। ঠোট কালচে। চোখের মণি লালচে। দলে থাকতে পছন্দ করে। বাঁকানাে ঠোট ছুরির মতাে ধারাল ।
পরিযায়ী ভুবনচিলের (৬৮ সেন্টিমিটার) লেজটা ইলিশ মাছের লেজের মতাে নয়। এদের বুক-পেটে হালকা খাড়া খাড়া দাগ । এটি আমাদের স্থানীয়টার চেয়ে আকারে কিছুটা বড়। একটানা উড়তেও পারে অনেকক্ষণ।
ভুবনচিল শীতকালেই বাসা করে বেশি, মাঝে-মধ্যে গরমকালেও। শচিল বাসা করে শরতে বেশি, শীতে কম। গরমকালেও ৰাসা করতে দেখা যায়। ভুবনচিল গাছের চেয়ে বেশি বাসা করে টাওয়ার, পানির ট্যাংকির তলায় বা ওপরে।
বড় বড় শহরে খুঁজলে ডিশ-অ্যান্টেনার ভেতরেও বাসা পাওয়া যাবে এরা বছরের পর বছর একই জায়গায় বাস করতে পছন্দ করে। দু জনে মিলে জায়গা নির্বাচন করে ২-৪ দিনে। বাসা বানায় প্রায়ই গাছের কাঁচা সরু ডাল দিয়ে !
গাছের কাঁচা ডাল পায়ে ধরে যখন আকাশে ঘুরে ঘুরে ওড়ে তখন মনে হয় ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। ঢাকার আকাশে এটা দেখা যায়, অন্যান্য শহরেও। ঢাকার মতিঝিলসহ বড় বড় ভবনগুলাের শীততাপ নিয়ন্ত্রণ বক্সের ওপরে বা আড়ালেও বাসা করে। ডিম প্রায়শ ৩টি। ২ ও ৪ সংখ্যা কম।
দু'জনে পালা করে তা দেয়। ডিম ফোটে ২৯-৩৩ দিনে। বাচ্চারা উড়তে পারে ৩০-৩৬ দিনে। ডিম পাড়ার পর থেকে বাচ্চাদের উড়তে শেখা পর্যন্ত ভুবনচিলদের (বিশেষ করে বড় বড় শহরে) স্বস্তি থাকে না। কাকেরা দলবেঁধে বাসার পাশে বসে, উত্যক্ত করে, জ্বালায় । ডিম-বাচ্চা নষ্ট করতে চায়। একটি পাখিকে তাই ডিম-বাচ্চার সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকতে হয়।
ভুবনচিলের প্রিয় খাদ্য মরা-ইদুর, মরা-মাছ, কাকের তুলতুলে বাচ্চা। বাসি-পচা খেতে ভালোবাসে। শহরের ডাস্টবিন, ময়লার ভাগাড় থেকে খাদ্যবস্তু তুলে খায়।
কসাই খানার পরিত্যক্ত হাড়-মাংস, নাড়িভুড়ি খুব পছন্দ। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ওরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শঙ্খচিলের মতাে এরাও বাচ্চাদের খাওয়ায় খাদ্য ঠোটে কেটে টুকরাে টুকরাে করে। ভুবনচিলের কণ্ঠস্বর হচ্ছে ‘চিরি চিরি চিরি'।
ভুবনচিলের প্রিয় খাদ্য মরা-ইদুর, মরা-মাছ, কাকের তুলতুলে বাচ্চা। বাসি-পচা খেতে ভালোবাসে। শহরের ডাস্টবিন, ময়লার ভাগাড় থেকে খাদ্যবস্তু তুলে খায়।
কসাই খানার পরিত্যক্ত হাড়-মাংস, নাড়িভুড়ি খুব পছন্দ। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ওরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শঙ্খচিলের মতাে এরাও বাচ্চাদের খাওয়ায় খাদ্য ঠোটে কেটে টুকরাে টুকরাে করে। ভুবনচিলের কণ্ঠস্বর হচ্ছে ‘চিরি চিরি চিরি'।
প্রসঙ্গত, এখানে একটি তথ্য দিচিছ। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হলে কেবল উড়তে শেখা আনাড়ি ভুবনচিলের ছানারা মারা পড়ে। ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় ২০০ বাচ্চা আহত-নিহত হয়।
পাখিপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আহত বহু পাখিকে পরম মমতায় চিকিৎসা ও সেবাযত্ন করে সুস্থ করে উড়িয়ে দেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপাশা মুনমুন নামের এক মেধাবী ছাত্রী একটি আহত ভুবনচিলকে পরম মমতায় বাসায় নিয়ে সেবাযত্ন করেন ২০০৮ সালেই। ওটাও ঝড়ে আহত হয়েছিল।
তিনি একটি আহত ঘুঘুকেও বাঁচিয়েছিলেন।
বুক-পেট সাদাটে। চোখের ওপরে যেন চওড়া কাজলের টান। বুজানাে অবস্থায় ডানার উপরিভাগ বাদামি ছাইরঙা।
চোখের মণি লালচে। ঠোটের ওপরটা হলদেটে, নিচটা কালচে। ডানার উপরিভাগে, ঘাড়ের দু'পাশটাতে চওড়া কালাে টান। তাইতাে এদেরকে 'কালাে ডানার চিল' বলা হয়। এদের প্রিয় খাদ্য ধানক্ষেতের ইদুর। কীটপতঙ্গও খায়। খায় ছােট ছােট সাপ ও ব্যাঙ। সুযােগ পেলে পাখির বাচ্চা, তক্ষক, কাকলাস, ইদুর শিকারের জন্য এরা শূন্যে উড়ে হােভারিং করে। দেখতে সুন্দর লাগে।
ভুবনচিলের মতাে এরা বাসা বাঁধার সময় একই জায়গায় ফিরে আসে। পুরনাে বাসাকে আবার নতুন করে সাজায়। এরা বাসা বেশি করে হেমন্তকালে। প্রায় সময়েই ডিম ৪টা, দৈবাৎ ২ ও ৩। দু’জনে পালা করে তা দেয়। ২৪-২৮ দিনে ডিম ফোটে। বাচ্চারা উড়তে পারে ২৮-৩০ দিনে।
চিল মােটেও ভালাে নেই বাংলাদেশে। সুন্দরবন, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-টিলাময় জঙ্গলেও ভালো নেই ওরা। খাবারের অভাব। বাসা বাঁধার জায়গার অভাব। অভাব ভালােবাসার।
আমরা কি কখনাে সােচ্চার হব না নিরীহ সুন্দর এই শিকারি বাঁচানাের জন্য? আমাদের শিশুরা কি শুনবে না চিল এর ডাক, দেখবে না ওদের? সুন্দর এই শিকারি বাঁচানাের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তােলা খুবই জরুরি।
পাখিপ্রিয় ছাত্রছাত্রীরা আহত বহু পাখিকে পরম মমতায় চিকিৎসা ও সেবাযত্ন করে সুস্থ করে উড়িয়ে দেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপাশা মুনমুন নামের এক মেধাবী ছাত্রী একটি আহত ভুবনচিলকে পরম মমতায় বাসায় নিয়ে সেবাযত্ন করেন ২০০৮ সালেই। ওটাও ঝড়ে আহত হয়েছিল।
তিনি একটি আহত ঘুঘুকেও বাঁচিয়েছিলেন।
৩, ধানচিল সাদাচিল (৩৫ সেন্টিমিটার):
বুক-পেট সাদাটে। চোখের ওপরে যেন চওড়া কাজলের টান। বুজানাে অবস্থায় ডানার উপরিভাগ বাদামি ছাইরঙা।
চোখের মণি লালচে। ঠোটের ওপরটা হলদেটে, নিচটা কালচে। ডানার উপরিভাগে, ঘাড়ের দু'পাশটাতে চওড়া কালাে টান। তাইতাে এদেরকে 'কালাে ডানার চিল' বলা হয়। এদের প্রিয় খাদ্য ধানক্ষেতের ইদুর। কীটপতঙ্গও খায়। খায় ছােট ছােট সাপ ও ব্যাঙ। সুযােগ পেলে পাখির বাচ্চা, তক্ষক, কাকলাস, ইদুর শিকারের জন্য এরা শূন্যে উড়ে হােভারিং করে। দেখতে সুন্দর লাগে।
ভুবনচিলের মতাে এরা বাসা বাঁধার সময় একই জায়গায় ফিরে আসে। পুরনাে বাসাকে আবার নতুন করে সাজায়। এরা বাসা বেশি করে হেমন্তকালে। প্রায় সময়েই ডিম ৪টা, দৈবাৎ ২ ও ৩। দু’জনে পালা করে তা দেয়। ২৪-২৮ দিনে ডিম ফোটে। বাচ্চারা উড়তে পারে ২৮-৩০ দিনে।
চিল মােটেও ভালাে নেই বাংলাদেশে। সুন্দরবন, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-টিলাময় জঙ্গলেও ভালো নেই ওরা। খাবারের অভাব। বাসা বাঁধার জায়গার অভাব। অভাব ভালােবাসার।
আমরা কি কখনাে সােচ্চার হব না নিরীহ সুন্দর এই শিকারি বাঁচানাের জন্য? আমাদের শিশুরা কি শুনবে না চিল এর ডাক, দেখবে না ওদের? সুন্দর এই শিকারি বাঁচানাের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তােলা খুবই জরুরি।


