বাংলাদেশের পাখি : বন মােরগ

বাংলাদেশের পাখি : বন মােরগ

সাঁওতাল বালিকার জানা ছিল বাসাটির অবস্থান। তাই সে সন্ধেবেলায় চীবাগান পাড়ি দিয়ে চলেছে বনমােরগটিকে ধরার আশায় । ওর বাসায় যে ডিম আছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত বালিকা। মরা একটি চা-গাছের সরু ডাল সে ভাঙতে দেখেছিল ৫ দিন আগে।

ভাঙা ডাল ঠোটে ধরে, চা-বাগানের তলা দিয়ে হেঁটে হেঁটে মােরগটি গিয়েছিল একটি টিলার পাশে। লাফ দিয়ে চড়ে বসেছিল হাত তিনেক ওপরে, টিলার গায়ে ওখানে বেশ বড়সড় গর্ত একটা, ঝােপঝাড়ে ঢাকা। ওখানে ঢুকে মােরগটি ঠোটের ডাল রেখে আবারাে বেরিয়ে এসেছিল। আবার খুঁজতে লেগেছিল শুকনাে ডালপালা । সাঁওতাল বালিকা বুঝে ফেলেছিল, বনমােরগটি বাসা করেছে ওখানে।

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের টিলাময় বন ও চা-বাগান বলতে গেলে মুখস্থ বালিকার । বহুবারই দেখেছে বনমােরগ-মুরগি, দেখেছে ছােট ছােট ছানা-পােনা। বাবা-ভাইদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে সে তীর-ধনুক দিয়ে বনমােরগ-মুরগি শিকার করতে যেমন দেখেছে, তেমনি চা-বাগানের আশেপাশে ও বনে ঘােরার সময় বেশ ক'বার বনমুরগির ডিম খুঁজে  পেয়েছে। ডিমগুলাে বাড়িতে এনে মজা করে খেয়েছেও।

মথুরার ডিমও সে খেয়েছে বারকয়েক। বালিকা তাই এই সন্ধেবেলায় চলেছে বাসায় বসা বনমােরগটিকে ধরতে। হিসেব মতাে বাসায় ২/১টি ডিমও থাকার কথা। বাবার কাছ থেকে জেনেছে সে, বনমুরগি ৪/৫ দিনের ভেতর বাসা সাজিয়ে ফেলে। তারপরে ডিম পাড়তে শুরু করে। রােজ একটি করে ডিম পাড়ে পােষা মুরগির মতােই। প্রথম ডিমটি পাড়ার পর থেকেই মুরগি রাতে ডিম। পেটের তলায় রেখে বসতে শুরু করে। প্রায় সময়েই ডিম পাড়ে ৫টি।

৪ ও ৬টি ডিমও দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বেরয় ১৯-২০ দিন পরে। সবগুলাে ডিম। ফুটতে ১২-১৪ ঘন্টা সময় লাগে। মুরগিমাতা আরাে ১দিন বাদে ছানাদের নিয়ে বাসা ছেড়ে দেয়। ছেড়ে যাওয়া বাসায় আর ফেরে না মা। রাতে টিলার আশেপাশের ঝােপঝাড়ের তলায়, চা বাগানের তলায় বা অন্য কোনাে যুৎসই জায়গায় মা ছানাগুলােকে ডানা-পেটের তলায় রেখে বসে ঘুমায় ।

হিসেব মতাে বাসায় ২-১টি ডিম থাকতে পারে। সবগুলাে ডিম পাড়ার পর এলে একই সঙ্গে মুরগি ও ডিম পেত সাঁওতাল বালিকা, কিন্তু ওই সময়ের ভেতর চা-শ্রমিকদের বা অন্য কারাে নজরে পড়ে যেতে পারে বাসাটি-বনমুরগিরা কখন বাসা করে, তা জানে এই তল্লাটের সবাই। শীত কমলেই ওরা বাসা বাঁধতে শুরু করে। বর্ষাকালের আগ পর্যন্ত যে কোনাে সময়েই বাস করতে পারে বনমুরগিরা।

বনমােরগদের ঘন ঘন ডাক শুনে বােঝা যায়-বনমুরগিদের বাসা বাঁধার কাজ চলছে। মােরগগুলাে এ সময় আনন্দে ঘন ঘন ডাক ছাড়ে। আশেপাশের সবাইকে যেন খুশির খবর। জানায়—আমাদের মুরগিগুলাে এখন ডিম-বাচ্চা তুলবে। পা টিপে টিপে সাঁওতাল বালিকা পৌঁছে গেল টিলাটির পাশে। আকাশে চাদ নেই। তারার আলােয় মােটামুটি দেখতে পাচ্ছে বালিকা।

জায়গামতাে পেীছে সে ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে খপ করে চেপে ধরতে গেল মুরগিটিকে, হাতের তলায় পড়লও মুরগিটি, কিন্তু বাঁ হাত বাড়ানাের আগেই মুরগি ‘টক টক' ডাক ছেড়ে উড়াল দিল। আশেপাশের সবাইকে বিপদসঙ্কেত জানিয়ে সে চা বাগানের মাথা ছুঁয়ে উড়ে গেল অনেকটা দূর। তারপর চুপচাপ সব। হতাশ বালিকার হাতে এল দু’টি ডিম। ভাবল, ডিম দু'টি রেখে যাই। মুরগিটি আবারাে আসবে, আরাে ডিম পাড়বে।

কিন্তু না। বাবার কাছে সে জেনেছে, ভয় পেয়ে বাসা ছাড়লে মুরগিরা আর ফেরে না বাসায়। এমন কি, বাসায় সদ্য ফোটা দু'একটি বাচ্চা থাকলেও না। তাই মুরগি গেছে যাক, দু'টি ডিম তাে সে পেয়েছে। এমন মনােভাব নিয়ে সে ফিরতি পথ ধরল ।

গত বছর সে একটি বাসায় ৬টি ডিম পেয়েছিল। সবগুলাে ডিমেই বাচ্চা জন্মে গিয়েছিল, খাওয়া যায় নি। ডিমগুলাে বাড়িতে এনে সে পােষা মুরগির পেটের তলায় দিয়েছিল। মুরগিটি ‘ডিম তা দেয়ার উত্তাপে' ছিল, তাই সে ডিমগুলাে-তা দিয়েছে।

সুন্দর ১২টি ছানা ফুটেছিল যার ৬টি বুনাে, ওদের রক্ত ছিল লালচে বাদামি। দু'দিন বাদেই ওরা পালিয়ে গিয়েছিল বনে। বালিকা জানত ওরা পােষ মানে না, চোখে চোখে রেখেছিল তাই। আটকে রাখা যেত। কিন্তু সেক্ষেত্রে ওরা খেত না কিছু, দু'চারদিনের ভেতরই মারা পড়ত। এটাও জানা ছিল বালিকার ।

এই যে বনমুরগির কথা বললাম এতক্ষণ, এদের মােরগগুলাে হয় খুব সুন্দর-হাটবাজার থেকে আমরা যে পােষা মােরগ কিনে খাই, তার ভেতরে মাঝে মধ্যে এমন দু'একটি মোরগ দেখা যায়, সেগুলাে দেখতে হুবহু বনমােরগের মতাে, কী গড়নে, কী রঙে। এ গুলাের ছবি তুলে বনমােরগ বলে চালিয়ে দিলেও সহজে কেউ ধরতে পারবে বলে মনে হয় না আমার। বনমােরগ দেখতে খুবই সুন্দর।

মাথার চমৎকার ফুলটা, গলার নিচের থলথলে চামড়াটা, চোখের চারপাশটা, বুজানাে অবস্থায় ডানা যেখানে লেজের গােড়ায় শেষ হয়েছে সেখানটাসহ পিঠের কিছু অংশের রঙ লাল। কান সাদাটে। ঠোট থেকে চোখের নিচ দিয়ে চওড়া কালচে-কমলা টান কানের গোড়ায় এসে মিশেছে। মাথার পেছন দিকের চমৎকার পেলব পালকগুলাের রঙ আলতা-লাল। ঘাড়-গলার বাহারি পালকের রঙ হলুদ। পিঠ-বুক কালাে।

ঋতুভেদে এই রঙ লালচে-হলদেটে হয়। পালকের শেষ প্রান্ত কালচে। বুজানাে পাখায় পালকের বিন্যাসগুলাে ভালােভাবে বােঝা যায়। গায়ের রঙ ঘন-বাদামি। নখের রঙও তাই। তরবারি নখটা (প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় দু’পায়ের পেছন দিকের যে দুটি নখ ওরা ব্যবহার করে) ছুরির মতন খুবই ধারাল এদের।

বনমােরগের ঘাড়-গলায় ঝুলে থাকা বাহারি পালকগুলাে যতটা সুন্দর, তার চেয়েও বেশি সুন্দর বােধহয় এদের লেজের গড়ন-ধরন, লেজ ও লেজের চকচকে কালাে পালকগুলাে। লেজের মূল পালদুটো উল্টো তরবারির মতাে দেখায়, লেজের অন্য পালকগুলাের চেয়ে এই দুটি বড়।

শ্রীমঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা লেজের দু'টি মূল পালক আমার সংগ্রহে আছে—সাঁওতালরা তীর-ধনুক দিয়ে ওটিকে শিকার করেছিল। শিকার করার পর মুহূর্তেই পালক দু'টি আমি টেনে তুলেছিলাম। পালক দুটির মাপ ২৯ সেন্টিমিটার। সুন্দরবন থেকে সর্বশেষ ১৯৯১ সালে যে দুটি মূল পালক আমি মৌয়ালদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলাম, সে দুটির মাপ ছিল ৩৪ সেন্টিমিটার।

 বনমুরগি দেখতেও কম সুন্দর নয়। পোষা মুরগির চেয়ে একটু লম্বাটে গড়নের হয় ওরা। ওরা এক নজরে বাদামি-লাল ও ছিট-ছােপযুক্ত পাখি। টান ও ছিট-ছােপ থাকে পােড়া ইটের রঙের মতাে পালকের ওপর। এদের লেজ লম্বাটে ধরনের । মূল পালক নেই।

এই মােরগ-মুরগিদের নাম বনমােরগ বা লাল বনমােরগ। ইংরেজি নাম Red Jungle Fowl. বৈজ্ঞানিক নাম Gazes gatlus. সুন্দবনের বনমােরগের (মুরগিও) মাপজোক যেমন নিয়েছি বারকয়েক, শ্রীমঙ্গলেও তা করেছি । আমি নিজে সুন্দরবনে মােরগ-মুরগি শিকার করেছি, শিকার করতেও দেখেছি। হাতে নিয়ে ওদেরকে নেড়েচেড়ে দেখার সুযােগ আমার হয়েছে।

১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এক শিকারি গুলি করেছিল একটি বনমুরগিকে, সুন্দরবনে। ওর সঙ্গে ছিল ৪টি ছানা। মুরগিটি আহত হয়েও উড়ে একটি বড় খাল পাড়ি দিয়েছিল।

ছানাগুলাে তাড়িয়ে ধরতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে গিয়েছিলাম আমরা। বারবার লুকাচ্ছিল ওরা। আত্মগােপনের অসম্ভব সুন্দর কেীশল ওরা জানে। একজনের পায়ের তলায় পড়ে ১টি ছানা মারা গিয়েছিল। ২টিকে ধরা গিয়েছিল। বাকিটি হারিয়ে গিয়েছিল গোলবনে।

এই লাল বনমােরগ আর বনমুরগিই হচ্ছে পৃথিবীর সব ধরনের পােষা মােরগ-মুরগির আদি পিতা-মাতা। সেই আদি পিতা-মাতা বাংলাদেশের সুন্দরবন, সিলেট-চট্টগ্রামের টিলা-পাহাড়িবনসহ নেত্রকোনা জেলার গারোপাহাড় এলাকা ও জামালপুর জেলার গারাে পাহাড় এলাকায় আছে।

আছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ইকোপার্কে। টাঙ্গাইলের মধুপুর বনেও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আমরা গর্ব অনুভব করতে পারি। এলাকাভেদে খাদ্যতালিকা একটু ভিন্ন। গারােপাহাড় এলাকায় ওদেরকে আমি ধানক্ষেতে নেমে ধান খেতে দেখেছি। বৃহত্তর সিলেটের বনমােরগৱাও ধান খাবার। সুযােগ পায়।

সুন্দরবনে আবার ধান নেই। বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনেও ধান খাবার সুযােগ খুবই সীমিত। তবে ওদের কমন খাদ্য তালিকায় আছে কচি ঘাস-পাতার ডগা, যে কোনাে ধরনের শস্যদানা, ছােট ছােট মাছ ও ব্যাঙ, নির্বিষ ও বিষধর ছােট সাপ।

কেঁচো, ছােট কাকড়া, আগুন, টিকটিকি ও বিভিন্ন ধরনের পােকা মাকড়সহ কাঁচা মরিচ, কচি বেগুন। সুন্দরবনের বাওয়ালি-মৌয়ালদের কাছে শুনেছি--ধান-চাল ছিটিয়ে মােরগ-মুরগি পাকড়াও করার চেষ্টা ওরা করে সুন্দরবনে। ভাতও ছিটায়। মৌয়ালরাই সুন্দরবনে মুরগির ডিম-বাসা বেশি পায় । সুন্দরবনের বাসার উপকরণে ঘাস, শুকনাে কেয়াপাতা-গোলপাতার আধিক্য থাকে। আমি যে ৩ বার সুন্দবনে ওদের ডিম-বাসা দেখেছি সেই ৩ বারই ছিল মাঘ মাস।

লালচে-বাদামির আভাসহ ডিমের রঙ সাদা। বনমােরগের শরীরের মাপ ৬০-৭০ সেন্টিমিটার। মুরগির মাপ ৪০-৪৫ সেন্টিমিটার। যদিও মােরগে মােরগে তুমুল লড়াই লাগে, তবুও একদলে ৭/৮টি মুরগি ও ৩/৪টি মােরগ দেখা যায়। ধান কেটে নেবার পর খুব ভােরে ও সন্ধ্যার আগে দলবেঁধে ওরা ধানক্ষেতে নামে। এই দুই সময়েই বন্দুকশিকারিরা ওদের শিকার করার মােক্ষম সুযােগ পায়।

এমনিতে কী শ্রীমঙ্গল, কী সুন্দরবন ওদেরকে শিকার করা খুবই দুরূহ কাজ। অত্যন্ত চালাক আর বুদ্ধিমান ওরা। মাটিতে বুকপেট ঠেকিয়ে ঝােপঝাড়ের তলায় বা গাছের আড়ালে আত্মগােপন করতে শুরা ওস্তাদ।

ভালাে দৌড়াতে যেমন পারে তেমনি পারে দ্রুত উড়তে। তবুও সুন্দরবনে ওরা গুইসাপ, মেছােপ ও সাগর-ঈগলের কবলে পড়ে যায় মাঝে-মধ্যে। জেলে-বাওয়ালিদের কাছে শুনেছি, কুমিরও নাকি ধরে ওদের জলপান করার সময়।

বনমােরগ-মুরগির মাংস খেয়েছি আমি বাল্য-কৈশােরে। কিন্তু আজ আর আমি পেলেও ওদের মাংস খাব না। কেননা এখন জানি, ওরী মানুষের বড় উপকারী বন্ধু। নানান রকম ক্ষতিকর পােকামাকড় ওরা খায়, বন-বনানীর স্বাস্থ্য ভালাে রাখে। আর বনের স্বাস্থ্য ভালাে থাকা মানে পরিবেশ ভালাে থাকা।

অভিজ্ঞতার আলােকে এবার কিছু তথ্য জানাচ্ছি :


১, বনমুরগির বাচ্চা ধরে পােষ মানানাে যায় না। কিছুই খায় না। সুযােগ পেলেই পালায়। চট্টগ্রামের রামগড়ের একটি চা বাগানের ম্যানেজারের ছেলে লতিফ, বাল্য-কৈশোের যে ওখানেই কাটিয়েছে। সে আমাকে বলেছে, বহুবার বনমুরগির বাচ্চা ধরে এনেছে (১৯৭০-৭৫), রাখতে পারে নি, পালিয়েছে, অথবা না খেয়ে মরেছে। সেই লতিফ বন্ধু ও সহকর্মী। আমার এলাকার এক বাওয়ালি বাল্যকালে আমাকে দুটি ডিম এনে দিয়েছিল, বাচ্চাও ফুটেছিল। পালাতে গিয়ে বাগানে গিয়ে পড়েছিল গুইসাপের কবলে।

২. পােষা মুরগির মতাে বনমুরগিও বাসা করার পর ডিম পাড়ার আগে ডাকাডাকি করে, ডিমে সে একাই তা দেয়। তা দেবার সময় মুরগির শরীর ফুলে থাকে, মেজাজ থাকে খারাপ। ওদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে ও সময়ে—যাকে বলা যায় ‘ডিম তা দেবার উত্তাপ।

৩. বিপদ দেখে সতর্ক সঙ্কেত দিতে বনমাের খুবই ওস্তাদ। খুব ভােরে, নির্জন দুপুরে আর সন্ধ্যার আগে বনমোরগের ডাক বেশি শােনা যায় । তবে গুদের গলার স্বর কম, পােষা মােরগের ডাকের মতাে চড়া নয় । রাত কাটায় ওরা বাঁশঝাড় ও অন্যান্য গাছের ডালে। বিপদসঙ্কেত পেলেই ছানারা হাওয়া হয়ে যায়।

৪, সুন্দরবনে ওরা হরিণ-শুয়ােরের আশেপাশে ঘােরে—উড়ন্ত পােকামাকড় খাবার আশায়। শীতে রোদ পােহায় মাটিতে শরীর এলিয়ে, পাখা মেলে দিয়ে। পাশাপাশি ওদের আশেপাশে ঘােরে কীট-পতঙ্গ ভাের্জী ছােট ও মাঝারি পাখিরা—ওই উড়ন্ত কীট-পতঙ্গ খাবার আশাতেই। ছােট হানারা মায়ের কোলে (পিঠে) চড়ে। পােষা মুরগির ছানাদের মতো ডাকাডাকি করে নী।

ওরা ধুলাে বা মাটি স্নান করতে পছন্দ করে। ওতে ওদের শরীরের পরজীবী পােকা ঝরে যায়, মরে যায়। অতি উৎসাহী শিশু-কিশােরেরা যদি বনমােরগ পর্যবেক্ষণ করতে চায়, তবে চা-বাগান এলাকা ও সুন্দরবনে গিয়ে শীতের ভােরে বা ধান কেটে নেবার পরে গোপন জায়গায় বসবে। বনমােরগ দেখার সুযােগ তাহলে পাওয়া যাবে হয়তো।

বনমােরগ সুন্দরবনে যথেষ্ট আছে। অন্যান্য জায়গার বনমােরগরা খুব বেশি ভালাে নেই । ডিম-বাচ্চা চুরি হয়। শিকারিদের হাতে মারা পড়ে। গত সেপ্টেম্বরে (২০০০ সাল) আমি ৩ দিনের জন্য পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলায় গিয়েছিলাম । খাগড়াছড়ি সদরের একটি বাজারে নাকি মাঝে মধ্যে বনমােরগ ওঠে। উপজাতিরা বিক্রি করতে আনে।

কিন্তু শিশু-কিশোরদের নিশ্চয়ই জানা আছে সরকার সব ধরনের পাখি ও বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ করেছেন। তাই শিশু-কিশোরদের উচিত হবে, বনমােরগ তাে বটেই, সব ধরনের পাখি শিকার ও বিক্রির বিরুদ্ধে সােচ্চার হওয়া।

যারা পাখি মারে ও বিক্রি করে, তাদের বােঝানাে ও সমবয়সীদের ভেতর যারা পাখিদের উপকারের কথা জানে না তাদের বােঝানাে । বনমােরগরা ভালাে থাকুক বাংলাদেশে—ওরা যে দেশের সম্পদ। ওদের ডাকে মুখরিত থাকুক আমাদের বনগুলাে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url