বাংলাদেশের গায়ক পাখি
বাংলাদেশের গায়ক পাখি |
যেসব শিশু-কিশাের গ্রামে বাস করে, তারা রােজ সকালেই ঘরে শুয়ে নানান রকম পাখির গান শুনতে পায়। বলা যায় পাখির গানেই তাদের ঘুম ভাঙে। বিছানায় থেকে তারা কত না বিচিত্র কণ্ঠের গান শােনে! গানের পাখিরা শিশু-কিশােরদের যেন ঘুম জাগানিয়া গান শােনায়। যারা একটু খেয়াল করে পাখির গান শােনে, তাদের কাছে যদি প্রশ্ন করা হয়, কোন পাখিটার গান। আগে শােনা যায়, তাহলে চট করে জবাব দিয়ে ফেলবে—টুনটুনি কিংবা দোয়েল। চড়ুইয়ের কথাও বলবে কেউ কেউ। জবাবটা ঠিক। এই তিনটি পাখিই ‘ভাের হয়েছে’ ঘােষণাটা আগে দেয়। এদের ঘােষণা শুনে একে একে অন্যরাও ঘােষণা দিতে শুরু করে। চারদিকটা তখন সরব হয়ে ওঠে পাখির গানে। তবে, উল্লিখিত তিনটি পাখির ভেতর টুনটুনিকেই প্রথম হিসেবে গণ্য। করা যায়। আকাশের দিকে মুখ তুলে কী চমৎকার ভঙ্গিমায় সে মিষ্টি সুরে। গায় ! সে যেন গান শােনায় আকাশকে। সে যেন সূর্যকে তাড়াতাড়ি উঠে আসতে বলে। আলাে ছড়িয়ে দিতে বলে চারদিকে।
অনেকেই হয়তাে বলতে পারবে, কোন পাখিটা সবার শেষে গলায় গান তােলে। পাখিটার নাম হচ্ছে তৌফিক বা ফটিকজল। যে এলাকায় ফটিকজল নেই, সে এলাকায় মুনিয়া এবং শ্বেতাফিকে এ দলে ফেলা চলে। শ্বেতাফিকে সাদা চোখ বা চশমাপাখিও বলা হয়। ঘুঘু তার কণ্ঠে ভৈরবী সুর তােলে সূর্য ওঠার পর।
যারা ফটিকজল দেখেছে কিংবা ওদের মিষ্টি মােলায়েম শিস শুনেছে, তারা কি তা ভুলতে পারবে কোনাে দিন ? কেননা, পাতার আড়ালে বসে ওরা যখন থেমে থেমে একটানা মিষ্টি শিস দিয়ে যায় তখন মনে হয় সে যেন পাতার আড়ালে বসে লুকোচুরি খেলছে। তার শিসের ভাষাটাকে অনায়াসে-“আমি কোথায় আছি, দেখতে পাবে না তুমি”-র সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া যায়। আকৃতিতে চড়ুইয়ের চেয়ে কিছুটা ছােট পাখি ফটিকজল। শিস বাজানাের সময় পাতার আড়ালে গিয়ে লুকোবে। ওটা ওদের স্বভাব।
যাদের বসবাস শহরে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে, তারাও ভাের বেলায় যে দু'চারটে পাখির গান শুনতে পায় না, তা কিন্তু নয়। ঢাকা শহরে অনেক পাখি আছে। গানের পাখির ভেতর টুনটুনি, বসন্তবৌরি, দোয়েল, শালিক, ঘুঘু, লাল কাঠঠোকরা, আবাবিল (হাউজ সুইফট), ফিঙে, বুলবুলি, বনচড়াই, হলদেবউ (কালাে মাথা), নাকটি বা বাতাসি, কাঠশালিক, টিয়ে, কোকিল, নীলকণ্ঠ আছে। এর ভেতর কিছু পাখি সারা বছর ঢাকা শহরে থাকে। শুধু ডিম-বাচ্চা তােলার সময় গ্রামের দিকে চলে যায়। কিছু পাখি এই আছে তাে। এই নেই। যেন বা ওরা রাজধানী শহরে বেড়াতে আসে। একটি নীলকণ্ঠকে সারা বছরই দেখা যায় শিশু একাডেমীর আশেপাশে। দুই-একটি দেখা যায়। পুরনাে বিমানবন্দর এলাকায়। আরও কয়েক জায়গায় আছে। সংখ্যায় হাতে গােনা। কাঠশালিক প্রচুর আছে ঢাকা শহরে। ঢাকা শহরে অল্প সংখ্যক নীল গিরধিও আছে। পাখিটিকে অনেকেই চেনে না। এই পাখিটি দেখতে খুবই সুন্দর। ঢাকা শহরের যে কোনাে জায়গা থেকে আকাশের দিকে তাকালে হাউজ সুইফট বা আবাবিল পাখির ঝাক দেখা যেতে পারে। ওরা বড় আমুদে পাখি, খেলুড়ে পাখি। মিষ্টি ওদের গান। প্রায় সারাক্ষণই আকাশে ওড়ে ওরা, গান গায়। ওদের সম্মিলিত কণ্ঠের গানকে ক্যাসেটবন্দি করে শুনলে ভালই লাগে। এরকম নেশা এই শহরে দু’চারজনের আছে। বাকি পাখিগুলােকে একটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে আশেপাশে কিংবা চিড়িয়াখানা এলাকার গাছগাছালিতে, বােটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, সােহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা বলধা গার্ডেনে। টুনটুনির গান শুনতে পাওয়া সম্ভব যখন তখন। এজন্য কান খােলা রাখতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে। ফাল্গুন মাসে ওদের গান বেড়ে যায়। ইলেকট্রিকের তারের উপর বসেও ওরা গলা ফুলিয়ে লেজ দুলিয়ে গান গায়। এ সময়ে ওরা বাসা বাঁধে বেশি। তাই সুখের গান গায়। ওরা আছে ঢাকা। শহরের সর্বত্র। সংখ্যাও অনেক। ওরা বেশি পছন্দ করে আবাসিক এলাকার গাছপালা ও ফুলবাগানে ঘুরতে। বাসাও করে গাছের দু'টি বা তিনটি পাতা।
যাদের বসবাস শহরে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে, তারাও ভাের বেলায় যে দু'চারটে পাখির গান শুনতে পায় না, তা কিন্তু নয়। ঢাকা শহরে অনেক পাখি আছে। গানের পাখির ভেতর টুনটুনি, বসন্তবৌরি, দোয়েল, শালিক, ঘুঘু, লাল কাঠঠোকরা, আবাবিল (হাউজ সুইফট), ফিঙে, বুলবুলি, বনচড়াই, হলদেবউ (কালাে মাথা), নাকটি বা বাতাসি, কাঠশালিক, টিয়ে, কোকিল, নীলকণ্ঠ আছে। এর ভেতর কিছু পাখি সারা বছর ঢাকা শহরে থাকে। শুধু ডিম-বাচ্চা তােলার সময় গ্রামের দিকে চলে যায়। কিছু পাখি এই আছে তাে। এই নেই। যেন বা ওরা রাজধানী শহরে বেড়াতে আসে। একটি নীলকণ্ঠকে সারা বছরই দেখা যায় শিশু একাডেমীর আশেপাশে। দুই-একটি দেখা যায়। পুরনাে বিমানবন্দর এলাকায়। আরও কয়েক জায়গায় আছে। সংখ্যায় হাতে গােনা। কাঠশালিক প্রচুর আছে ঢাকা শহরে। ঢাকা শহরে অল্প সংখ্যক নীল গিরধিও আছে। পাখিটিকে অনেকেই চেনে না। এই পাখিটি দেখতে খুবই সুন্দর। ঢাকা শহরের যে কোনাে জায়গা থেকে আকাশের দিকে তাকালে হাউজ সুইফট বা আবাবিল পাখির ঝাক দেখা যেতে পারে। ওরা বড় আমুদে পাখি, খেলুড়ে পাখি। মিষ্টি ওদের গান। প্রায় সারাক্ষণই আকাশে ওড়ে ওরা, গান গায়। ওদের সম্মিলিত কণ্ঠের গানকে ক্যাসেটবন্দি করে শুনলে ভালই লাগে। এরকম নেশা এই শহরে দু’চারজনের আছে। বাকি পাখিগুলােকে একটু খুঁজলেই পাওয়া যাবে আশেপাশে কিংবা চিড়িয়াখানা এলাকার গাছগাছালিতে, বােটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, সােহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা বলধা গার্ডেনে। টুনটুনির গান শুনতে পাওয়া সম্ভব যখন তখন। এজন্য কান খােলা রাখতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে। ফাল্গুন মাসে ওদের গান বেড়ে যায়। ইলেকট্রিকের তারের উপর বসেও ওরা গলা ফুলিয়ে লেজ দুলিয়ে গান গায়। এ সময়ে ওরা বাসা বাঁধে বেশি। তাই সুখের গান গায়। ওরা আছে ঢাকা। শহরের সর্বত্র। সংখ্যাও অনেক। ওরা বেশি পছন্দ করে আবাসিক এলাকার গাছপালা ও ফুলবাগানে ঘুরতে। বাসাও করে গাছের দু'টি বা তিনটি পাতা।
জুড়ে দিয়ে। ওদের বাসা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ওরা কিন্তু বারাে মাস থাকে এই মহানগরীতে। এই শহরেই বাসা বাধে, ডিম-বাচ্চা তােলে। ওদের বাচ্চারাও বড় হয়ে নাগরিক পাখি হয়ে যায়। দোয়েল এবং আবাবিলসহ কাঠশালিক, শালিক, মুনিয়া, মৌটুসি, নীলটুনি, ফটিকজল, বাতাসি, ভরত, বুলবুলি, বেনেবউ, চড়ুই ছাড়া অন্য গানের পাখিরা ঢাকা শহরে সাধারণত বাসা বাধে। না।
বাংলাদেশের পাখি : ঘুঘু |
ঢাকা শহরে সবার আগে ঘুমভাঙানি গান গায় টুনটুনি। তার পর দোয়েল। আবাবিল ডাকে সবার শেষে। কারও বাড়ির ঘুলঘুলি কিংবা দেয়ালের ফঁক-ফোকরে যদি ওদের বাসা থাকে তাে কথাই নেই। সকালে ঘরে শুয়েই ওদের “কিচমিচ–খিরর...র...” গান শােনা যায়। ভারি মিষ্টি ওদের গলা ! সকালের আলাে ফুটে ওঠার আগ পর্যন্ত ওরা বাসায় বসেই একটানা গান গেয়ে চলে। ওরা আছে ঢাকা শহরের আকাশ জুড়ে। বাংলাদেশে তাে বটেই, সারা পৃথিবীতে যত আমুদে আর খেলুড়ে পাখি আছে আবাবিলই বােধহয়। সবার সেরা। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেও ওরা অনেকক্ষণ গান গায়। ওরা গাছের ডালে কিংবা ইলেকট্রিকের তারে বসতে পারে না। ওদের পা খুবই দুর্বল, গােড়ালি নরম। তাই ওরা অন্য পাখির মতাে পায়ে ভর দিয়ে বসতে পারে না। কিন্তু বাসার মুখে ঝুলে থাকে সময় সময়। আকাশে উড়ে উড়ে ওরা যেন গােল্লাছুট খেলে, কানামাছি খেলে। ওরা উড়তে পারে জেট প্লেনের মতাে, ওরা ঘুরতে পারে সুতােকাটা ঘুড়ির মতাে।
যারা গ্রামে থাকে, বলা যায় পাখির গানেই তাদের ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে জেগে উঠোনে নেমেই হয়তাে দেখা গেল দু’টি শালিককে। উঠোনের গাছপালায় দেখা যেতে পারে নৃত্যরত ফুটফুটি কিংবা ফটিকজলকে। উঠোনের কোণে হয়তাে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি দোয়েল কিংবা কমলাবউ। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি।
যাদের বাড়ির সামনে আছে ফুলবাগান কিংবা ফলবান গাছপালা, তারা হয়তাে দেখতে পাবে ছােট এবং বড় বসন্তবৌরি কিংবা মধুপায়ী ও কীটপতঙ্গ খেকো মৌটুসি, নীলটুনি, বুলবুলি, রামগাংরা, ফটিকজল, চটক কিংবা টুনটুনি।
গ্রামের বাড়ির আঙিনার কিনার থেকে যে গাছপালা, ঝােপঝাড়, লতাগুল্মের শুরু, তাকেই বলা হয় গ্রামীণ জঙ্গল। কত বিচিত্র ধরনের ছােটবড় গাছ, ঝােপঝাড়, লতাগুল্ম, বাশঝাড় ! গ্রামীণ জঙ্গলের বৈশিষ্ট্যই আলাদা। ওই জঙ্গল থেকে ভেসে আসে কত না পাখির ডাক। একটু খেয়াল করলেই বােঝা যাবে-কোনটা গান আর কোনটা ডাক। পাখির গান এবং ডাকের ভেতর তফাৎ অনেক।
ওই সকালে হাত-মুখ ধােবার জন্য পুকুরঘাটে যাবার সময় হয়তাে নজরে পড়ল একটি চমৎকার পাখি। হতে পারে সেটা শ্যামা, দুধরাজ, নাচুনে কিংবা ভীমরাজ। চোখ জুড়িয়ে যায় ওদের দেখলে—মন ভরে যায়।
পুকুরঘাটে বসে হয়তাে দেখা গেল একটি কাদাখোচা পাখি কিংবা খঞ্জনকে। পুকুরের ওপাড়ের একটি বড় গাছে বসে হয়তাে গান গাইছে একটি ঘুঘু কিংবা কোকিল। ছােট বসন্তবৌরির গানও আসতে পারে কানে। ওরা এপাশওপাশ মাথা দোলায় আর তালে তালে গান গায়—“কুক কুক কুক।” ওর মাথা দোলানির ভঙ্গিমা দেখলে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
বাংলাদেশের পাখি : দোয়েল |
সকালের দিকে পাখিরা ওড়ে বেশি। ওদের উড়ে যাবার ভঙ্গি দেখে (সব পাখিরই ওড়ার আলাদা আলাদা ভঙ্গি আছে) কেউ কি পাখিটির নাম বলতে পারে? গলা শুনে বুঝতে পারে—কোন পাখির গান কিংবা ডাক ওটা? সম্ভবত না। তবে, চেষ্টা করলে, নেশা থাকলে এবং পাখি পর্যবেক্ষণের অভ্যাস গড়ে তুললে এটা আস্তে আস্তে রপ্ত হয়ে যাবে। পাখির গলার স্বর খেয়াল করে শুনলে এটা মুখস্থ হয়ে যাবে। আর এই মুখস্থ হওয়া তথা গলা শুনে পাখির নাম বলতে পারার মধ্যে আনন্দ লুকিয়ে আছে। আছে গর্ব। আছে সুখ। আরও যদি কষ্ট করা যায়, কান পেতে খেয়াল করা যায় পাখির কণ্ঠ, তাহলে বুঝতে পারা সম্ভব পাখিটা কী বলছে। পাখিরাও কথা বলে। কাঁদে। ওরা হাসতে জানে না বটে, হাসিটা প্রকাশ করে গানের মাধ্যমে। ওদের হাসি বুঝতে পারাটাও অসম্ভব কোনাে ব্যাপার নয়। মৌটুসি, নীলটুনি, হলদেবউয়ের গলা শুনে বুঝতে পারা যায়-ওরা এখন বাসা বাঁধছে কিনা, ওদের বাসায় ডিম-বাচ্চা হয়েছে কিনা। পর্যবেক্ষণটা যদি নেশায় পরিণত হয়, তাহলে পাখির কণ্ঠস্বর শুনে অনেক কিছুই বুঝতে পারা সম্ভব। যেমন ভয় পেয়েছে। কিনা। পেলে, কী দেখে ভয় পেয়েছে। সাপ না বেজি? নাকি কোনাে শিকারি পাখি।
বাংলাদেশের অধিকাংশ গানের পাখিই বাসা বাধার গান, বাচ্চাদের খাওয়ানাের গান এবং আদর করার গান (মানুষ যেমন তার দুধের শিশুকে আদর করে, ঘুম পাড়ায়) গায়। এদের ভেতর আবার সেরা হচ্ছে মৌটুসি ও নীলটুনি। টুনটুনি আর নাচুনেও তেমন পিছিয়ে নেই।
কী সুন্দর আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশ পাখির দেশ। এদেশ গাছের দেশ। ফুল-ফল-প্রজাপতির দেশ। নদীর দেশ। শহর বাদে এদেশের যে কোনাে গ্রাম-জনপদের পথ ধরে চলার সময় চারপাশে তাকালে কোনাে না কোনাে পাখিকে দেখতে পাওয়া যাবে, কান পাতলে শােনা যাবে কোনাে পাখির ডাক কিংবা গান। এটা আমাদের গর্ব। এই ভাগ্য নিয়ে বর্তমান পৃথিবীতে কম মানুষ জন্মগ্রহণ করে। বাঙালিরা আজও গর্ব করে বলতে পারে : “আমাদের প্রকৃতি আছে। আমাদের ফুল, পাখি, প্রজাপতি আছে। আমাদের পাখিরা গান গায়। আমাদের নদীরা বয়ে যায়। আমাদের প্রকৃতিতে ছয়টি ঋতু তার সােহাগী চুমু এঁকে দেয়।”
কিশাের বয়সে অনেকেরই পাখির বাসা খোঁজার নেশা থাকে। বিচিত্র যেমন পাখি, বিচিত্র তেমনি তাদের বাসা। কী সুন্দর বাসা। অনেক পাখির তুলতুলে গদি বিছানাে বাসা দেখলে তাে ওখানে শুয়ে ঘুমােতে ইচ্ছে করে। পাখির কুশি কুশি বাচ্চা দেখলেও চোখ-মন ভরে যায়। চোখ না ফোটা বাচ্চা। দেখতে তাে আরও সুন্দর। হাতে এনে আদর করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আদরটা বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে গেলে বাচ্চাদের ক্ষতি হতে পারে। ওরা ব্যথা পেয়ে কাদতে পারে। বাচ্চাদের কাদানাে কি ঠিক? ওদের বাবা-মার কষ্ট লাগে। খব। তাই পাখির বাচ্চাদের চুরি করে আনা ঠিক নয়। কষ্ট দেয়াও উচিত নয়। ওদের ডিমও নষ্ট করা চলবে না।
কিশাের বয়সে অনেকেরই পাখির বাসা খোঁজার নেশা থাকে। বিচিত্র যেমন পাখি, বিচিত্র তেমনি তাদের বাসা। কী সুন্দর বাসা। অনেক পাখির তুলতুলে গদি বিছানাে বাসা দেখলে তাে ওখানে শুয়ে ঘুমােতে ইচ্ছে করে। পাখির কুশি কুশি বাচ্চা দেখলেও চোখ-মন ভরে যায়। চোখ না ফোটা বাচ্চা। দেখতে তাে আরও সুন্দর। হাতে এনে আদর করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আদরটা বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে গেলে বাচ্চাদের ক্ষতি হতে পারে। ওরা ব্যথা পেয়ে কাদতে পারে। বাচ্চাদের কাদানাে কি ঠিক? ওদের বাবা-মার কষ্ট লাগে। খব। তাই পাখির বাচ্চাদের চুরি করে আনা ঠিক নয়। কষ্ট দেয়াও উচিত নয়। ওদের ডিমও নষ্ট করা চলবে না।
যাদের এই পাখির বাসা বা বাচ্চা খোজার নেশা আছে, তাদের হয়তাে জানা আছে যে, কোন পাখি কখন এবং কোথায় বাসা বাঁধে। কিন্তু তারা কি বলতে পারবে একটি পাখির ওড়ার ভঙ্গি দেখে-- ওটা এখন বাসা বাধার কাজে ব্যস্ত ? গান শুনে ? ওটার বিশ্রামের ভঙ্গি দেখে বলতে পারবে— ওটার বাসা বানানাে শেষ হয়ে গেছে? কিংবা ওদের বাসায় তুলতুলে বাচ্চা ফুটেছে? হয়তােবা পারবে না। তবে, পর্যবেক্ষণ দীর্ঘকালীন হলে এটাও পারা সম্ভব। কেননা, যে কোনাে পাখি, বিশেষ করে গায়ক পাখিরা বাসায় বাচ্চা ফোটার পর খুশিতে গদগদ হয়ে গান গায়, সবাইকে যেন নতুন অতিথির আগমন সংবাদ জানায়, নৃত্য করে। মানুষের ঘরে একটি নতুন শিশুর জন্ম হলে মানুষ যেমন খুশি হয়, পাখিরা তার চেয়ে কম খুশি হয় না। পাখিদের এই খুশি হবার ধরনটা যদি জেনে ফেলা যায়, তাহলে বােঝা যাবে-- আজ ওদের বাসায় বাচ্চা ফুটেছে। এই জানার ভেতরে লুকিয়ে আছে অপরিসীম আনন্দ। এই জানার কৌতূহল থেকে উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত পাখিবিশারদ দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। একজন সালিম আলী কৌতূহল থেকে প্রথমে পাখিপর্যবেক্ষক এবং পরে পাখিবিশারদ হয়েছিলেন।
মাঠে গেলে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গাছপালা--ঝােপঝাড়ে নানারকম পাখি দেখা যায়। মাঠের শেষ প্রান্তেই হয়তাে রয়েছে বিশাল বিল অথবা ঝিল। থাকতে পারে ঝােপঝাড় ঢাকা ডােবা-নালা-জলাশয়। মাঠের মাটিতে, আইলের আশে-পাশেও নানা রকম পাখিকে চরতে দেখা যায়। এসব জায়গায় দেখা যাবে ফিঙে, কসাই, মুনিয়া, সুঁইচোরা, মাঠচড়াই, বাবুই, খঞ্জন, পিপিট, আবাবিল (দ্বি-বিভক্ত লেজ), বাতাসি, মেঠো কাঠঠোকরা, গােবক, বুনাে কবুতর, টিয়ে, ঘুঘু, হট্টিটি, ঢেঙ্গা, বক, বাজ, মাছরাঙা, চিল, ডাহুক, কোড়া, বালিহাঁস, মেটে হাঁস, সরালি হাঁস, দাঁড়কাক, পানকৌড়ি, ডুবুরি, জলপিপি, ছাতারে, শালিক, মােহনচূড়া, কালিম, জলমুরগিসহ আরও কত পাখি । উল্লিখিত পাখিদের ভেতর মাঠের পাখি এবং জলের পাখিকে আলাদা করে চেনা দরকার।
যেসব পাখি মূলত মাঠে চরে, বেশিরভাগ সময় মাঠে কিংবা গাছপালায় কাটায় এবং অধিকাংশ সময় মাঠের আইলে অথবা মাঠের গাছপালা, ঝোপঝাড়ে বাসা করে, তাদেরকেই মাঠের পাখি বলা হয়। তাই বলে ওরা যে গ্রামীণ জঙ্গলে কিংবা বাড়ির গাছপালায় এসে বেড়িয়ে যায় না, তা কিন্তু নয়। মাঠের পাখিরা রাতে এসে গ্রামীণ জঙ্গলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আশ্রয় নেয়।
যেসব পাখি জলে চরে, জলের আশেপাশে চরে, খাবারের জন্য মূলত জলের ছােট ছােট মাছ, পােকামাকড়, জলজ উদ্ভিদের শেকড়-বাকড় ও কন্দের উপর নিভরশীল, বাসাও করে জলের পাশের গাছপালা-ঝােপঝাড় কিংবা জলজ উদ্ভিদের ভেতর, তাদেরকেই বলে জলচর পাখি। এ ছাড়াও নদী-সাগরের মােহনা ও উপকূলে নানান রকম পাখি দেখা যায়। ওদের বলা হয় উপকুলীয় পাখি! ওরা জলচর পাখির অন্তর্ভুক্ত। সুন্দরবনের সুন্দরী হাঁসও (Masked fin foot) এই দলভুক্ত।
যেসব পাখি মূলত গ্রামীণ জঙ্গলে থাকে, তারা হচ্ছে গ্রামীণ জঙ্গলের পাখি। কিছু পাখিকে আবার আমাদের একান্তই কাছের কিংবা ঘরবাড়ির পাখি বলা যায়। যেমন, বুনাে কবুতর, চড়ুই, দোয়েল, নীলটুনি, শালিক ইত্যাদি। বুনাে কবুতর ঘরে বাসা করে। দোয়েল প্রায়ই ঘরের আঙিনায় আসে, সুযােগ পেলে ঘরেও ঢুকে পড়ে। বাসাও করে থাকে ঘরবাড়ির ফাঁকফোকরে। অথচ, দোয়েল সহজে পােষ মানে না। কারও কাছে ধরাও দেয় না। কাছে থেকেও ওরা যেন অনেক দূরের পাখি। না আপন, না পর। চড়ুইও তাই। নীলটুনি বাড়ির আঙিনার ডালিম, বরই ইত্যাদি গাছের শাখা কিংবা লাউয়ের ডগায় বাসা বানায়। এই বাসাগুলাে থলের মতাে ঝুলে। থাকে। গেরস্থ বাড়ির আঙিনা ছাড়া অন্য কোথাও বাসা করে না ওরা। বাড়ির আঙিনায় ভাত, ধান, ডাল, সরিষা খেতে নামে কাক, ছাতারে, শালিক। নিরিবিলি বাড়ি হলে তিলা ঘুঘু, লাল ঘুঘু এবং সবুজ ঘুঘুও আসে। কুকোও বেড়িয়ে যায়। উঠোনে এসে। তাছাড়া আঙিনার গাছপালা, লাউ, শিমের মাচানে কত পাখি আসে। কেউ কিন্তু ধরা দেয় না।
কিছু কিছু পাখি আবার গেরস্থ বাড়ির আশেপাশের বাগানেই বাসা করে। রাত্রিযাপন করে। গায়ক পাখিদের ভেতর এই দলে পড়ে নাচুনে, হলদেবউ, মৌটুসি, বসন্তবৌরি, শালিক, টিয়ে, হাড়িচাচা, টুনটুনি, দুধরাজ, কমলাবউ, কুকো। ইত্যাদি। এ ছাড়াও কিছু পাখি আছে যারা লােকালয় থেকে দূরে কিংবা গ্রামীণ জঙ্গলের গভীরে থাকে এবং বাসা করে। এই দলে পড়ে নওরঙ, দিনেকানা, শ্যামা, ফটিকজল, ফুটফুটি, কাঠঠোকরা, ফুলঝুরি, শ্বেতাফি, চটক, ভুতুম পেঁচার দল, লাল ঘুঘু, সবুজ ঘুঘু, কাঠশালিক, হরিয়াল, পাতা বুলবুলি ইত্যাদি। উল্লিখিত পাখিগুলাের ভেতর ভুতুম পেঁচার দল বাদে বাকিরা গানের পাখি। বাংলাদেশের ছােট কোকিল সবুজ কোকিলকে আলাদা করে চেনা দরকার। কালাে কোকিলের মতাে এদের গান তেমন মধুর না হলেও এরা কিন্তু বাসা করে। কালাে কোকিল যে কাকের বাসায় ডিম পাড়ে, এটা তাে প্রায় সবাই জানে। বাংলাদেশের আরও দুটো গানের পাখি ‘বউ কথা কও’ এবং চোখ গেল'। এ দুটো পাখি ঢাকা শহরেও দেখা যায়। ঢাকা শহরে কখনাে কখনাে ভরত, কসাই, ভীমরাজ, ছাতারে, পিপিট, খঞ্জন ও ধানটুনিও দেখা যায়।
বাংলাদেশের পাখি : দুধরাজ |
গ্রামের বাড়িতে শুয়ে ভােররাতে দিনেকানার একটানা কুড়ুৎ কুড়ুৎ’ গান, মাঝরাতে ডাহুকের কান্নার মতাে গান, নওরঙের করুণ গান যারা শুনেছে, বা আজও শােনে, তারা সত্যিই ভাগ্যবান। কেননা, ওরা কমে যাচ্ছে দিন দিন। অনেকের কত রকম শখ আছে। যেমন— ডাকটিকিট সংগ্রহ করা। যদি শখ করে। বিভিন্ন রকমের পাখির পালক, বাসা (পরিত্যক্ত) সংগ্রহ করে পাশাপাশি সাজিয়ে টানিয়ে রাখা যায়, প্রতিটি বাসার গায়ে সেই পাখিটির নাম লেখা ছােট কাগজ সেঁটে রাখা যায় তাহলে শখ যেমন মিটবে তেমনি জানা যাবে পাখি বিষয়ের অনেক তথ্য।
অনেকেই ডাহুক ও নওরঙের গান শুনলেও পাখি দুটোকে দেখেছে কম। ডাহুক দেখা সহজ, কি নওরঙ দেখা খুব কঠিন ব্যাপার। ওরা থাকে গভীর গ্রামীণ জঙ্গলের ঘন ঝােপঝাড়ে। ইচ্ছে করেই ওরা বাইরে আসে না। ঝােপঝাড়ের তলা দিয়ে হেঁটে বেড়ায়। চেষ্টা করলে দেখা যায়। গ্রামে প্রচলিত আছে যে, ওরা রাতভর ডেকে ডেকে গলার রক্ত তুলে ডিমে মাখিয়ে দেয়। এ না হলে নাকি ওদের ডিম ফুটে বাচ্চা হয় না। কথাটা মিথ্যা। যারা উৎসাহী, তারা পর্যবেক্ষণ করলে বুঝতে পারবে কারণটা। বুঝতে পারবে— কেন নীলটুনি গেরস্থ বাড়ির আঙিনা ছাড়া অন্য কোথাও বাসা বাঁধে না।
পাখি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আজও গবেষণার অন্ত নেই। পাখি পর্যবেক্ষণ, ওদের আচার-আচরণ ইত্যাদি খুঁটিনাটি বিষয় আজ বেশি মর্যাদা পাচ্ছে উন্নত বিশ্বে। আমাদের দেশের কেউ যদি একদিন নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্বখ্যাত হতে পারে, সেটা হবে বাংলাদেশের গৌরব। তবে, পাখি দেখলেই, বাইনােকুলার-ক্যামেরা নিয়ে ঘুরলেই তাকে পাখি পর্যবেক্ষক বলা যাবে না। পর্যবেক্ষক হচ্ছে সে, যে শুধু পাখিটিকে চেনেই না, জানে পাখিটির মৌলিক আচরণগুলাে। যেমন, ওড়ার ভঙ্গি, কণ্ঠস্বর, বাসার ধরণ-গডন ও ডিম-বাচ্চা। কখন তােলে তা। পর্যবেক্ষক হওয়াটাও কিন্তু সহজ কাজ নয়।
যাদের পাখির বাসা খোজার নেশা আছে, তাদের একটি খারাপ অভ্যাসও আছে। তারা যখন তখন বাসার ভেতরে আঙুল দেয়, হাত দেয়, ডিম ছুঁয়ে। দেখে। এটা কিন্তু ঠিক নয়। এতে বাসা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তেমিন। ডিমও নষ্ট হতে পারে।
যারা পাখির বাসা খোজে, তাদের জানা আছে যে, কিছু কিছু পাখি গাছের কোটরে, মাটির গর্তে বাসা করে। কেউ করে গাছের শাখায়, ঝােপঝাড়ে, কেউবা ক্ষেতের আইলের ভেতর। আবার কিছু পাখি আছে যারা বাসাই করে না, অন্য পাখির বাসায় চুরি করে ডিম পেড়ে আসে। কিছু পাখি আছে, যারা বাসা করে। , আবার অন্যের বাসায়ও ডিম পাড়ে না। খােলা মাঠে কিংবা মাটির উপরে। তারা ডিম-বাচ্চা তােলে। এ দলে প্রথমেই পড়ে নাইটজার এবং হট্টিটি। এসব বিষয় নিয়ে যে কেউ ব্যাপক অনুসন্ধান চালাতে পারে। পাখিবিষয়ক ডায়েরি করতে পারে। কোন পাখিকে বিশেষ বিশেষ ঋতুতেই শুধু দেখা যায়, কোন কোন পাখিকে সারা বছরই দেখা যায়, তা ডায়েরিতে লিখে রাখা যেতে পারে। এই ডায়েরিই একদিন মূল্যবান সম্পদে পরিণত হতে পারে।
গানের পাখি কাকে বলে, তা এবার জানা যাক। অনেকেই অনেক গানের পাখির নামও জানে। কিন্তু কেন একটি পাখিকে গানের পাখি বলা হবে, সেটাও। জানা দরকার। অর্থাৎ, কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে একটি পাখির ডাককে গান বলা যাবে? পাখিবিজ্ঞানের সংজ্ঞা মেনেই আমি এই বইয়ে ২০টি পাখির কথা লিখেছি।
যে পাখির গলাটি মিষ্টি, লম্বা দম, এবং যে কোনাে গান ছড়া বা কথার সঙ্গে তার ডাকটিকে অনায়াসে মিলিয়ে নেয়া যায়— রেলগাড়ির শব্দের মতাে, সেই পাখিটিই গানের পাখি। হতে পারে তার কণ্ঠ ভরাট, মিনমিনে কিন্তু মােলায়েম। যে পাখির ডাক শুনলে মন ভরে যায়, বুকের ভেতরে ভাললাগা খেলা করে, সেটাই গানের পাখি। যার কণ্ঠে কারুকাজ আছে, যার কণ্ঠটি সুরেলাসেই তাে গানের পাখি। সুরেলা মিষ্টি কণ্ঠ থেকে যে একটানা সুর বাতাসে ছড়িয়ে দিতে পারে, প্রয়ােজনের সময় তাল-লয়ের ওঠা-নামা করাতে পারে এবং যার কণ্ঠটি মিলে মিশে একাকার হয় প্রকৃতির সঙ্গে সেই-ই তাে গানের পাখি। ইচ্ছে করলে তার কণ্ঠের সঙ্গে মানুষ তবলার তাল, বেহালার সুর, বাঁশের বাশির কান্না মিলিয়ে নিতে পারে তাকেই তাে বলা হয় গানের পাখি। আবার কিছু কিছু পাখির গানের সঙ্গে ছড়া-কবিতার লাইন মেলানাে চলে – তাল-মাত্রা ঠিক রেখে। এ হচ্ছে আমার নিজস্ব সংজ্ঞা। কিন্তু পাখিবিজ্ঞানের সংজ্ঞা আমি মেনেছি।
অবশ্য পাখিবিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী যে সব পাখির গলায় সুরের বাক্স (ভয়েস বক্স) নেই সেগুলাে গায়ক নয়। হােক না কোকিলের গলা যতই মিষ্টি ও সুরেলা, সুরের বাক্স নেই বলে সে অগায়ক পাখি। আর সুরের বাক্স থাকায় কর্কশ গলার কাক হচ্ছে গায়ক পাখি। হেঁড়ে গলার হাঁড়িচাচা গায়ক, অথচ ডাহুক গায়ক নয়। তাই আমি আগে উল্লিখিত গায়ক পাখির সংজ্ঞা অনুযায়ীই গায়ক পাখির নাম সাজিয়েছি। পাখিবিজ্ঞানের আলােকে দেখলে গায়ক পাখির তালিকা থেকে বাদ পড়বে কোকিল, বউ কথা কও, চোখ গেল, তিলাঘুঘু, কণ্ঠিঘুঘু, হরিয়াল, কোড়া, ডাহুক, পাপিয়া, বসন্তবৌরি, মােহনচূড়া ও নাইটজার।
বাংলাদেশের সব গানের পাখির নাম সবাই জানে না। জানলে তাে মজা। হয়, তাই না? গানের পাখিরা হচ্ছে কোকিল, দোয়েল, কালাে দোয়েল, বউ কথা কও, চোখ গেল, শ্যামা, ময়না, তিলাঘুঘু, কণ্ঠিঘুঘু, হরিয়াল, কসাই, ভরত, ভীমরাজ, লাটোরা, ছাতারে, কোড়া, ডাহুক, নওরঙ, মৌটুসি, নীলটুনি, পাপিয়া, মাঠচড়াই, বাবুই, বসন্তবৌরি, মােহনচূড়া, হলদেবউ, ফিঙে, কাঠশালিক, শালিক, চড়ুই, বুলবুলি, নাইটজার, ফটিকজল, আবাবিল, চটক, ফুটফুটি, নাচুনে, থ্রাস, ফুলঝুরি, টুনটুনি, শ্বেতাফি, বাতাসি, বনচড়ুই, মুনিয়া, খঞ্জন, পিপিট, কমলাবউ, কেশরাজ, রামগাংরা, হরবােলা, ময়না ইত্যাদি। এ ছাড়াও বাংলাদেশে আরও কিছু পাখি আছে, তাদেরকে না ফেলা যায়। গায়কের দলে, না ফেলা যায় অন্য দলে। যেমন, বালিহাস। ওরা বাসা করে গাছের কোটরে। ডাকে চমৎকার ডি ডিগ, ডি ডিগ। টিয়ে গানের পাখি। কিন্তু লটকন ? মুনিয়া গানের পাখি। কিন্তু বালুচাটা? লটকন ও বালুচাটা গানের পাখি নয়। মাছরাঙা কি গান গায়? সুন্দরবনের সুন্দরী হাঁস ও বনমােরগ তাে গলা ফুলিয়ে ডাকে লম্বা সুরে। ওদেরকে কী আমরা গানের পাখি বলব ? সিলেটের জঙ্গলের চমৎকার পাখি মথুরাকে ? এসব প্রশ্নের জবাব উৎসাহী ও কৌতূহলী যে কারাে পর্যবেক্ষণের উপর ছেড়ে দেয়া হল।
গানের পাখি কাকে বলে, তা এবার জানা যাক। অনেকেই অনেক গানের পাখির নামও জানে। কিন্তু কেন একটি পাখিকে গানের পাখি বলা হবে, সেটাও। জানা দরকার। অর্থাৎ, কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে একটি পাখির ডাককে গান বলা যাবে? পাখিবিজ্ঞানের সংজ্ঞা মেনেই আমি এই বইয়ে ২০টি পাখির কথা লিখেছি।
বাংলাদেশের পাখি : টুনটুনি |
যে পাখির গলাটি মিষ্টি, লম্বা দম, এবং যে কোনাে গান ছড়া বা কথার সঙ্গে তার ডাকটিকে অনায়াসে মিলিয়ে নেয়া যায়— রেলগাড়ির শব্দের মতাে, সেই পাখিটিই গানের পাখি। হতে পারে তার কণ্ঠ ভরাট, মিনমিনে কিন্তু মােলায়েম। যে পাখির ডাক শুনলে মন ভরে যায়, বুকের ভেতরে ভাললাগা খেলা করে, সেটাই গানের পাখি। যার কণ্ঠে কারুকাজ আছে, যার কণ্ঠটি সুরেলাসেই তাে গানের পাখি। সুরেলা মিষ্টি কণ্ঠ থেকে যে একটানা সুর বাতাসে ছড়িয়ে দিতে পারে, প্রয়ােজনের সময় তাল-লয়ের ওঠা-নামা করাতে পারে এবং যার কণ্ঠটি মিলে মিশে একাকার হয় প্রকৃতির সঙ্গে সেই-ই তাে গানের পাখি। ইচ্ছে করলে তার কণ্ঠের সঙ্গে মানুষ তবলার তাল, বেহালার সুর, বাঁশের বাশির কান্না মিলিয়ে নিতে পারে তাকেই তাে বলা হয় গানের পাখি। আবার কিছু কিছু পাখির গানের সঙ্গে ছড়া-কবিতার লাইন মেলানাে চলে – তাল-মাত্রা ঠিক রেখে। এ হচ্ছে আমার নিজস্ব সংজ্ঞা। কিন্তু পাখিবিজ্ঞানের সংজ্ঞা আমি মেনেছি।
অবশ্য পাখিবিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী যে সব পাখির গলায় সুরের বাক্স (ভয়েস বক্স) নেই সেগুলাে গায়ক নয়। হােক না কোকিলের গলা যতই মিষ্টি ও সুরেলা, সুরের বাক্স নেই বলে সে অগায়ক পাখি। আর সুরের বাক্স থাকায় কর্কশ গলার কাক হচ্ছে গায়ক পাখি। হেঁড়ে গলার হাঁড়িচাচা গায়ক, অথচ ডাহুক গায়ক নয়। তাই আমি আগে উল্লিখিত গায়ক পাখির সংজ্ঞা অনুযায়ীই গায়ক পাখির নাম সাজিয়েছি। পাখিবিজ্ঞানের আলােকে দেখলে গায়ক পাখির তালিকা থেকে বাদ পড়বে কোকিল, বউ কথা কও, চোখ গেল, তিলাঘুঘু, কণ্ঠিঘুঘু, হরিয়াল, কোড়া, ডাহুক, পাপিয়া, বসন্তবৌরি, মােহনচূড়া ও নাইটজার।
বাংলাদেশের সব গানের পাখির নাম সবাই জানে না। জানলে তাে মজা। হয়, তাই না? গানের পাখিরা হচ্ছে কোকিল, দোয়েল, কালাে দোয়েল, বউ কথা কও, চোখ গেল, শ্যামা, ময়না, তিলাঘুঘু, কণ্ঠিঘুঘু, হরিয়াল, কসাই, ভরত, ভীমরাজ, লাটোরা, ছাতারে, কোড়া, ডাহুক, নওরঙ, মৌটুসি, নীলটুনি, পাপিয়া, মাঠচড়াই, বাবুই, বসন্তবৌরি, মােহনচূড়া, হলদেবউ, ফিঙে, কাঠশালিক, শালিক, চড়ুই, বুলবুলি, নাইটজার, ফটিকজল, আবাবিল, চটক, ফুটফুটি, নাচুনে, থ্রাস, ফুলঝুরি, টুনটুনি, শ্বেতাফি, বাতাসি, বনচড়ুই, মুনিয়া, খঞ্জন, পিপিট, কমলাবউ, কেশরাজ, রামগাংরা, হরবােলা, ময়না ইত্যাদি। এ ছাড়াও বাংলাদেশে আরও কিছু পাখি আছে, তাদেরকে না ফেলা যায়। গায়কের দলে, না ফেলা যায় অন্য দলে। যেমন, বালিহাস। ওরা বাসা করে গাছের কোটরে। ডাকে চমৎকার ডি ডিগ, ডি ডিগ। টিয়ে গানের পাখি। কিন্তু লটকন ? মুনিয়া গানের পাখি। কিন্তু বালুচাটা? লটকন ও বালুচাটা গানের পাখি নয়। মাছরাঙা কি গান গায়? সুন্দরবনের সুন্দরী হাঁস ও বনমােরগ তাে গলা ফুলিয়ে ডাকে লম্বা সুরে। ওদেরকে কী আমরা গানের পাখি বলব ? সিলেটের জঙ্গলের চমৎকার পাখি মথুরাকে ? এসব প্রশ্নের জবাব উৎসাহী ও কৌতূহলী যে কারাে পর্যবেক্ষণের উপর ছেড়ে দেয়া হল।
এবার সংক্ষেপে আরও কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক। আমাদের দেশে তাে নানান রকমের সুন্দর সুন্দর পাখি আছেই। কিন্তু বিশেষ বিশেষ ঋতুতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকেও আমাদের এই সুন্দর দেশটিতে নানান রকম সুন্দর সুন্দর পাখি বেড়াতে আসে। বেশি আসে শীতকালে। ওদেরকে বলা হয় অতিথি বা পর্যটক পাখি। সময় মতাে ওরা আবার যার যার দেশে ফিরে যায়। আমাদের দেশের পাখিদের যেমন শিকারি পাখি, মাছখেকো পাখি বা পােকামাকড়, কীটপতঙ্গ খেকো পাখি ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা চলে, তেমনি সুন্দরবনের পাখি, শ্রীমঙ্গলের লাওয়াছড়া বনের পাখি, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাখি, ঢাকা শহরের পাখি ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা চলে। যেমন, সন্দরী হাঁস পাখিটি সুন্দরবন ছাড়া অন্য কোথাও দেখা যায় না। ধনেশ-পাখি সুন্দরবনে নেই, কিন্তু লাওয়াছড়ায় আছে।
সবার বুঝতে চেষ্টা করা উচিত পাখিদের গানের ভাষা। গানের পাখি কোনগুলাে চেনা উচিত বাংলাদেশের পাখিদের। এগুলাে দরকার। জানা দরকার প্রকৃতিতে ওদের অপরিসীম অবদানের কথা। মনে রাখতে হবে—পাখিরা প্রকৃতির উড়ন্ত-দুরন্ত সুন্দর। ওরা প্রকৃতির নেপথ্য সঙ্গীত। পাখি না থাকলে প্রকৃতি থাকবে না, ফুল ফুটবে না— প্রজাপতি ছুটবে না। ছয়টি ঋতু পালিয়ে যাবে অন্য কোথাও। পাখিরা গান না গাইলে বাংলাদেশে হয়তাে সকালও হবে না।