বাংলাদেশের পাখি : ফটিকজল

বাংলাদেশের পাখি  ফটিকজল
বাংলাদেশের পাখি : ফটিকজল

কনকনে শীত। ভাের হয়েছে কেবল। আলাে ফোটে নি। পাখিরা জাগে নি। ছােট এক হলুদ-কালাে পাখি বাঁশের কঞ্চি থেকে বুক তুলল। গত রাতে সে এখানেই আশ্রয় নিয়েছিল। ওই পাশের কঞ্চিতে তার সঙ্গী। এই পাখিটি ঘাড় ফিরিয়ে সঙ্গীকে ডাকল। সঙ্গীও কঞ্চি থেকে বুক তুলল। 

তারপর দু জনে প্রায় একই সঙ্গে, একই ভঙ্গিতে পাখা মেলে, পা তুলে পাখার ব্যায়াম করে নিল। ডান পা উঁচু করে প্রথমে করল বাঁ পাখার ব্যায়াম। বাম পা উঁচু করে ডান পাখার ব্যায়াম করল তারপরে। অপরূপ দৃশ্য। এবার দু' জনে শরীরের পালক ফুলিয়ে, লেজের আগাটা দুলিয়ে প্রচণ্ড ঝাকুনি তুলল শরীরে। যেনবা রাত্রের ক্লান্তি-শ্রান্তি সব ঝেড়ে ফেলল। তারপরে দ্বিতীয় পাখিটি পালক প্রসাধনে মগ্ন হল। দু-একটা ফুল-পালক খসে পড়তে লাগল। প্রথম পাখিটি শুধু পা উঁচু করে নাক চুলকাল শিল্পিত ভঙ্গিতে, তাতেই খসে পড়ল তিনটি সুন্দর ফুল-পালক। এবার সে পাখা মেলল আলাে-আঁধারির ভেতর দিয়ে। 

সুন্দর হলুদ গাঁদা ফুল ফুটে আছে এক বাড়িতে। ওই বাগানে অনেক ফুল। সবগুলােতেই জমে আছে আকাশের চোখের জল, রাতের শিশির। পাখিটি এসে বসল একটি ফুলের উপরে। ফুলটি একটু কাত হল, দু-চার ফোটা শিশির পড়ল মাটিতে। পাখিটি ফুল থেকে শিশির পান করল। ইচ্ছে করেই এই প্রচণ্ড শীত-সকালে নিজের বুক ভিজিয়ে নিল ফুলে বুক চেপে। তারপরে উড়ে গিয়ে ঢুকে পড়ল ওপাশের শেওড়া গাছটির ভেতরে। একটু বাদেই ভেসে এল যেন। এক অলৌকিক সুর। শুরু হল আস্তে। ক্রমে তা চড়তে লাগল। তারপর চুপ। আবারও শুরু হল নতুন করে। কী মিষ্টি আর মােলায়েম ওই শিস ! বেহালার মতন করুণ সুর যেন। শীতের হিম হিম ভােরবেলার বাতাসে যেন করুণ কান্না ছড়িয়ে দিচ্ছে ওই হলুদ কালাে পাখিটি। ওর বুকে যেন জমে আছে অনেক ব্যথা। শিস বাজিয়ে ও যেন প্রকৃতির কাছে নালিশ জানাচ্ছে। শুরু করছে-টি-ই-ই’ দিয়ে শেষ হচ্ছে ‘টু-ই-টু-উ-উ-উ-ই’ দিয়ে। একটানা সে গান গাইছে ১০ সেকেণ্ড। একটু দম নিচ্ছে। আবারও শুরু করছে। এমনিতেই সে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক পাখি। তারপরে শিশির গিলে গলাকে বানিয়ে নিয়েছে মােলায়েম। তাই তাে তার গান শুনলে মানুষের বুকেও ব্যথা। জাগে, মন আনচান করে ওঠে। ওর গলায় আছে সুরের কারুকাজ। তাললয়-বােলচালের চমৎকার ওঠা-নামা। তবে, গান গাওয়ার সময় সে কিছু নিয়ম মেনে চলে। খােলা জায়গায় বসে গান গাইবে না। চলে যাবে ডাল-পাতার আড়ালে। গােপন জায়গায় থেকে সে সুর ছড়াবে চারদিকে। ওসময় ওকে দেখতে পাওয়া সহজ কথা নয়। খুঁজতে গেলেই ও চুপ মেরে যায়। আরাে একটা বৈশিষ্ট্য আছে ওর। আকাশে রঙধনু উঠলে, গােধূলিবেলায় বৃষ্টি হয়ে থেমে গেলে, পরে সূর্যের সােনালি আলাে চারদিকে ছড়ালে ওর গানের নেশা জাগে। ওরকম সময়ে ও পাতার আড়ালে গিয়ে গান গাইবেই। আর ওসময়ে। ওর গানকে অলৌকিক বলেই মনে হয়।


এই পাখিটি গান গাইল প্রায় বিশ মিনিট। ভােরের আলাে ফুটেছে। গান ফুটেছে আশেপাশের আরাে অনেক পাখির গলায়। পাখির গানে মুখরিত চারদিক। এই তাে বাংলাদেশ।

এই পাখিটি ফুড়ুৎ করে বেরুল শেওড়াগাছের ভেতর দিয়ে। সােজা এসে নামল ফুলবাগানে। পেটে খিদে জেগেছে। এখন চাই কিছু পােকামাকড়, কীটপতঙ্গ। প্রথমেই সে বসল একটি সূর্যমুখী ফুলের ওপরে। হলুদের ওপরে হলদ। কী অপরূপ দৃশ্য ! সে পাপড়ির ভেতরে খুঁজছে খাবার। সে পাপড়িতে উল্টো হয়ে ঝুলছে। সূর্যমুখী দুলছে । একটা পতঙ্গ যেন উডল। ধাওয়া করল পাখিটি। ডানায় শব্দ উঠল চটপট। শূন্যে চমৎকার ভঙ্গিতে পাক খেল পাখিটি, ঠোটের ফাকে শব্দ উঠল চট। পতঙ্গ মুখে এসে বসল গাঁদাফলের ওপরে। থাকত যদি এখন সকালের মিষ্টি রােদ ! হলুদের ওপরে হলুদ পাখি জলত যেন। হলুদ সােনালু ফুলের ওপর যখন ঝােলে এই হলুদ পাখি, তখনাে সৃষ্টি হয় অপরূপ দৃশ্যের। হলুদে হলুদে যেন একাকার হয়ে যায়। রূপালি জোছনা রাতেও কখনাে কখনাে গান গায় এবং শিস বাজায় অলৌকিক সুরে।

সরু লিকলিকে এক গেছােসাপ ছিল ওঁৎ পেতে। পাখিটি যেই গিয়ে বসেছে। মাধবীলতার ঝাড়ে, অমনি ও খপ করে ধরে ফেলল পাখিটির ডান পা। পাখির চেঁচানি আর দাপাদাপি তখন দেখে কে! উড়ে এল ওর সঙ্গী। চুপচাপ উড়তে লাগল চারপাশে। তুখােড় এক বাজ এতে আকৃষ্ট হল। সকালবেলায় যদি পাওয়া যায় ওকে। নাস্তাটা খাওয়া হবে। সাঁই করে ওপরে উঠল সে, দেখতে পেল বিপদগ্রস্ত পাখিকে। বােমারু বিমানের মতন ডাইভ মেরে নেমে এল ও ফুলবাগানের মাথার ওপরে। ধাবমান বাজ দেখে সাপের প্রাণও গেল উড়ে। ও ব্যাটা পাখি তাে শিকার করেই। সাপও খায়। সাপ তাই ছেড়ে দিল মুখের শিকার। পাখি পড়ল মাটিতে। পড়েই ঢুকে গেল কলাবতী ফুলগাছের গােড়ায়। বাজ বিফল হল। অসম্ভব দক্ষতায় সে শূন্যেই ব্রেক কষল, পাঁই করে ঘুরেই নখরে গেঁথে ফেলল সাপ। উড়ে গেল দক্ষিণ দিকে। বিপদ কেটে গেছে বুঝার পর হলুদ ছােট পাখিটি উড়ল। পায়ে লেগেছে সামান্য চোট। প্রকৃতির নিয়মেই দু’দিনে সেরে যাবে।

সুন্দর ছােট এই হলুদ-কালাে পাখিটির নাম ফটিকজল। তৌফিকও বলা হয়। বাংলাদেশের কোনাে কোনাে অঞ্চলে তাকে হলুদ টুনিও বলা হয়। জন্মের পর থেকে একটি মানুষ কত পাখিকেই দেখে। সেই মানুষটি বুড়াে হবার পরেও অনেক পাখির সঠিক নামটি জানে না। অথচ, প্রতিদিনই তাকে হয়তাে দু'চার বার দেখছে। অনেক পাখি আমাদের প্রতিবেশীর মতন। হরহামেশাই দেখা যায়। উঠোন-বাড়ির গাছপালা ও ফুলবাগানে আসে। তবুও নাম জানা হয় না। যেমন এই ফটিকজল পাখি। বাংলাদেশের ১২ ভাগ মানুষ এর নাম জানে। উৎসাহী শিশু-কিশােরদের উচিত প্রথমে চারপাশে দেখা সব পাখির নাম জানা। প্রকৃতির কী কী উপকার ওরা করে তা জানতে হবে পরে। তারপরে জানাতে হবে। আশেপাশের সবাইকে। একজন বৃদ্ধ মানুষ, যিনি জীবনভর একটি পাখি দেখছেন, তিনিও যদি জানতে পারেন সঠিক নামটি, নিঃসন্দেহে খুশি হবেন। আর চারপাশের মানুষেরা যদি পাখিদের উপকারিতার কথা জানে, তাহলে তারাও পাখিদেরকে ভালবাসতে শিখবে। আর পাখিদের কি ভাল না বেসে পারা যায় ! পাখিরা কত সুন্দর ! কী সুন্দর সুন্দর নাম ওদের ! এই যেমন ফটিকজল পাখিটি। কী বাহারি তার রঙ ! কত সুন্দর এক পাখি ! ফটিকজলের ইংরেজি নাম Common iora বৈজ্ঞানিক নাম Aegithina tiphia. বিশ্বের বহু দেশে এই পাখি আছে। সবারই স্বভাব-চরিত্র, খাদ্য, গান, বাসা বাঁধার কৌশল ও ডিম-বাচ্চার সংখ্যা। মােটামুটি একই রকম। শান্ত-শিষ্ট এক ভদ্র পাখি সে। কারাে সঙ্গে সহজে লাগতে চায় না। খুব বেশি দূর পর্যন্ত ওড়ে না ! চালচলনে একটা আভিজাত্য ফুটে ওঠে। নিরীহ। আরামপ্রিয়।

পুরুষ আর স্ত্রী পাখি হঠাৎ করে সনাক্ত করা কঠিন। দু জনেরই গলা, কপােল, চোখের পাশ, বুক-পেট ও লেজের তলা চকচকে হলুদ। পুরুষের। কপাল-মাথা কালাে। স্ত্রীর মাথায় সােনালি হলুদের ওপর কালাের আবছা। একটা টান। স্ত্রীর লেজ হলদেটে। পুরুষের লেজ কালাে। পুরুষের ঘাড় কালাে, চওড়া আড়াআড়ি একটা কালাে দাগ গলার প্রায় নিচ পর্যন্ত এসেছে। স্ত্রীর ঘাড় হলদেটে লাল, পুরুষের মতন অস্পষ্ট কালাে দাগ আছে। পুরুষের পা মরিচার মতন, তবে তাতে যেন তেল মাখানাে। স্ত্রীর পা ওরকমই, তবে তাতে নীলচে ভাব। দু' জনের পায়ের মতন ঠোটের রঙও একই রকম। দু’ জনেরই কুচফলের মতন মায়াবী চোখ। মখমল দিয়ে গড়া যেন ওদের শরীরের পালক। আদুরে আদুরে চেহারা। পুরুষ ও স্ত্রী দু' জনেরই বুজানাে ডানার ওপরে আড়াআড়ি দু’টি চওড়া সাদা টান আছে। গােলগাল ধরনের শরীর। দু’জনেরই বুজানাে ডানার নিচের দিক থেকে ওপরের দিকে চমৎকার কারুকাজ করা। লম্বায় দু' জনে একই রকম। প্রায় ১৩ সেন্টিমিটার। স্ত্রী সামান্য বড়। হয়। ঠোট ১ সেন্টিমিটারের কিছু বেশি। রােদে ঠোটের রঙকে আকাশি নীল। বলে মনে হয়। আর এদের শরীরের রঙ খােলে বর্ষাকালে। হেমন্তকাল পর্যন্ত। থাকে। ফটিকজলকে শীতে কিছুটা ফ্যাকাসে লাগে। তবে এদের তুলতুলে। ফুটফুটে বাচ্চাগুলাে যখন উড়তে শেখে কেবল, তখন ওদের বুক-পেট যে কী রকম চকচক করে। বাচ্চারা দেখতে খুবই সুন্দর। বাসায় থাকা ছোট বাচ্চাদের রঙ থাকে কচিপাতার মতন সবজেটে। আবার বাসা যখন বানায়, তখন পুরুষ পাখির আনন্দ এতই বেড়ে যায় যে, তার রঙ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে খুশিতে নাচে। নিজের শরীরকে গােলগাল করে বসে থাকে। শুন্যে লাফিয়ে উঠে ঘুরপাক খায়। স্ত্রীর চারপাশে অথবা বাসার পাশে ঘুরে ঘুরে নাচে পালক ফলিয়ে লেজ দুলিয়ে। বাসায় ডিম-বাচ্চা হলেও পুরুষটি আনন্দে গান গায়। কচি বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দেয় পরম মমতায়।

ফটিকজল বাংলাদেশের সব এলাকায় আছে। ঢাকা শহরের পার্কগুলােতে ওদের দেখা যায়। উৎসাহী শিশু-কিশােরেরা মিরপুর চিড়িয়াখানা ও বােটানিক্যাল গার্ডেনে গেলেই ওদের দেখতে পাবে। বাংলাদেশে ওরা ভালই আছে। খাবার অভাব যেমন নেই, তেমনি নেই বাসা বাঁধার গাছের অভাব। ওরা খুব সুন্দর বাসা বানায়। সরু দো অথবা তে-ডালায়। চায়ের কাপের মতন আকার, যদিও বড় অতটা নয়। বাসার মুখের ব্যাস ২০-২৪ সেমি.। নিচের দিকের ব্যাস ১২-১৬ সেমি.। গভীরতা ৩–৬ সেমি.। বাসার চারপাশেই থাকে। মাকড়সার জালের আবরণ। এতে বাসার বাঁধনটা শক্ত থাকে। অল্প ঝড়-বাতাসে ক্ষতি হয় না। বাসার উপকরণ হচ্ছে মরা দূর্বাঘাস, পাটের সরু আঁশ, শুকনাে সরু ঘাস, গাছের সরু ও নরম শিকড়, সরু লতা ইত্যাদি। বাসা খুব উঁচুতেও করে না, একেবারে নিচুতেও নয়।

অন্যান্য অনেক পাখির মতন এরাও বাসার জায়গা খুঁজতে বেরুয়। দু’ জনে মিলেমিশে পছন্দ করে। দুজনেই বাসা সাজায়। বাসা বানাতে সময় লাগে ৪ দিন। জায়গা নির্বাচনে অবশ্য ২/১ দিনের বেশি ব্যয় করে না। বাসা শেষ হলে স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে। অধিকাংশ সময় ৩টি ডিম হয়। ২ ও ৪-এর সংখ্যা কম। ১৫ থেকে ১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। দু' জনে পালা করে ডিমে তা দেয়। বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাচ্চারা উড়তে শেখে ১৪-১৬ দিনে। তারপরেও প্রায় ১ মাস মা-বাবার সাথে সাথে থাকে। পেছনে পেছনে উড়ে কেঁদে কেঁদে খাবার চায়। এই বাচ্চারা হয় ভদ্রগােছের। বলতে গেলে দুষ্টুমি করেই না। বাসায় থাকতে খাবার নিয়েও মারামারি লাগায় না। উড়তে শেখা বাচ্চাদের দেখায়। হলুদ ফুলের মতন।
ফটিকজলের ডিম টিকটিকির ডিমের চেয়ে তিন গুণ বড় হয়। চকচকে ফকফকে ডিম। দুধের হলুদ সরের মতন রঙ। তার উপরে ধূসর-সাদা ভাব। বাদামি ছিট-ছােপ থাকে। হাতের তালুতে সব ক'টি ডিম রাখলেও ওজন টের পাওয়া যায় না।

ফটিকজল খুবই চালাক পাখি। কখনাে কখনাে এরা বাসার পাশে বা অল্প দূরে আরেকটি অসমাপ্ত বাসা করে রাখে। কেননা, দায়ে পড়লে কোকিলপাপিয়ারা এদের বাসায়ও ডিম পেড়ে রাখে। ভুল করে ওরা অসমাপ্ত বাসায় তাড়ঘড়ি ডিম পেড়ে যায়। ফটিকজলের কোনাে ক্ষতি হয় না। ফটিকজল, এই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় আমি ৩ বার পেয়েছি। অবশ্য কোনােবারই বাসায় কোকিলের ডিম দেখি নি – যদিও কোকিলের আয়ােজনটা দেখেছি ওদের বাসা ঘিরে।

ফটিকজল মূলত কীটপতঙ্গ ও পােকামাকড়সহ ওদের ডিম-বাচ্চা খায়। উড়ন্ত পােকাকে ধাওয়া করে ধরতে ওস্তাদ। গাছের ডাল-পাতায় ঝুলতে পারে চমৎকার। একটি ফটিকজল দেখলেই বুঝতে হবে পাশে অন্যটি আছে। ওরা জোড়ায় জোড়ায় ঘােরে। ডাকাডাকি কম করে। ডাকলে গলার স্বর কর্কশ ধরনের হয়। শিস বাজায় যখন তখন, তা হয় মােলায়েম। শিসের ভাষা কখনাে কখনাে দোয়েলের বলে ভুল হয়। হুইই-চিইই-ই-ছিট ছিটছিই-ই-ই-..। বাসার কাছে শত্রু দেখলে ডাকে‘চ্যারর-চ্যা-চঁা-উ-চি-চা’ ধরনের। বনবাগান, ঝােপঝাড়ই বেশি পছন্দ। খােলা জায়গায় কম যায়। বৃষ্টির জলে গােসল করে। শিশির ও বৃষ্টির জল খায় গাছের পাতা থেকে। বাচ্চাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষার কৌশল এদের জানা নেই। কোনাে এক সঙ্গী মারা গেলে অন্যজন দীর্ঘদিন একাকী থাকে, কাঁদে। বাচ্চা হারালেও কাঁদে। কান্নার সুর আবার ভিন্ন।

যখন বাসা থাকে না, তখন রাতে এরা গাছের ডালে আশ্রয় নেয়। দিব্বি ঘুমায়। শীতের রাতে শরীর ফুলিয়ে ছােট একটা উলের বলের মতন করে রাখে। ঠোট রাখে পিঠে খুঁজে। ঘুমটা এত গাঢ় যে, টর্চের ফোকাসেও নড়ে না, ভয় পায় না, নিচের দিকে তাকায় না। তাই বলে গাছে চড়ে ধরাও সহজ নয়। উড়ে যায়।

দরদ ভরা কণ্ঠের গায়ক, হলুদ গাঁদাফুলের পাপড়ি ও ভােরের সূর্য থেকে রঙ চেয়ে যে বুকে পেটে মেখে নিয়েছে, আকাশ থেকে রঙ এনে যারা চোখের মণিতে ঘষেছে, নিরীহ-সুন্দর সেই পাখিটিও কিন্তু ফুল-ফলের পরাগায়নে। দারুণ সাহায্য করে। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও পােকামাকড় খেয়ে ফল-ফসলের উপকার করে। সে শুধু সুন্দর এক গায়ক পাখি নয়, প্রকৃতির এক উত্তম বন্ধু। সবার তাই উচিত একে ভালবাসা।‘ফটিকজল’ – যার কণ্ঠেও কখনাে কখনাে। উচ্চারিত হয় এই শব্দ সে ভাল থাক আমাদের দেশে, সমগ্র বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশে আরাে এক ধরনের ফটিকজল শীতে কখনাে কখনাে দেখা যায়। ওরা আসে বেড়াতে। নাম সােনালি মাথা ফটিকজল। পুরুষের মাথা-ঘাড় টকটকে হলুদ, তাতে যেন সােনার মিহি গুঁড়াে ছড়ানাে। তার উপরে যেন কয়েকটি সূক্ষ্ম কালাে সূতা রেখে দেওয়া। স্ত্রীর রং উজ্জ্বল। লালচে ও সােনালি আভা ছড়ানাে-ছিটানাে শরীরে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url